অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ লিবারেশন আর্কাইভের অনবদ্য সেমিনার


বৃহত্তর ওয়াশিংটনে গঠিত বাংলাদেশ লিবারেশন আর্কাইভ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার ৩১ শে মার্চ ম্যারিল্যান্ডের বেথিসডার একটি লাইব্রেরীতে অনবদ্য একটি সেমিনারের আয়োজন করে। উপস্থাপক শামিম চৌধুরী প্রথমেই বাংলাদেশ লিবারেশন আর্কাইভের লক্ষ্য , আদর্শ ও কর্মপন্থা তুলে ধরেন। তার পর শুরু হয় প্রধান আকর্ষণ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ Reminiscence of Bangladesh Liberation War।

অত্যন্ত ব্যতিক্রম ধর্মী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ভিত্তিক এই সেমিনারে তিনজন বক্তা ,তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন এবং বিশ্লেষণ করেন।

সেমিনারের প্রথম বক্তা আর্নল্ড জাইটলিন , ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে সংবাদসংস্থা এপির সংবাদদাতা ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। ২৫শে মার্চের কালরাতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার সূচনা প্রত্যক্ষ করেন এবং পরে ২৭শে মার্চ রাস্তায় বেরিয়ে যে হত্যাযজ্ঞ দেখেন সে সম্পর্কে তিনি ঢাকা থেকে রিপোর্ট পাঠান। মি জাইটলিন ফেব্রুয়ারী মাসে পেশাওয়ারে জুলফিকার আলী ভুট্টার সঙ্গে এক একান্ত বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন । তিনি জানান যে মি ভুট্রো ঐ বৈঠকে এটা পরিস্কার করে দেন যে তিনি ঢাকায় জাতীয় পরিষদে অধিবেশনে যাবেন না। এই একান্ত বৈঠক সম্পর্কে জাইটলিন ঐ সেমিনারে আরও বলেন যে ভুট্টো তাঁকে পরিস্কার করে বলেন যে তিনি পাকিস্তানের দুটি শাখায় দু জন প্রধানমন্ত্রী চান। এতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এদিকে শেখ মুজিবর রহমান তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও অসামরিক আমলা পরিবেষ্টিত হয়ে সম্ভবত অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হয়ে বাঙালির অধিকার আদায় করতে পারতেন না । সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন বঙ্গবন্ধু আর্নল্ড জাইটলিনকে বলেন যে ভুট্টো যদি এই দুই প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টিই চান , তা হলে তাই-ই হোক। এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে আর্নল্ড জাইটলিন আসলে বলতে চেয়েছেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন । জাইটলিনের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন , সেমিনারের প্রধান আকর্ষণ, সে দিনের শেষ বক্তা প্রবীণ অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।

তাঁর মনোজ্ঞ আলোচনায় ছ দফা কি স্বায়ত্বশাসনের দাবি ছিল , নাকি স্বাধীনতারই সেই বিষযটি বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইসলাম বলেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছ দফার মাধ্যমে কার্যত বাংলাদেশের জন্য তাঁর এক দফা দাবি আদায়ের দিকেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। ছদফার বেশ কয়েক দফার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইসলাম বলেন যে ঐ দফাগুলো মানলে পাকিস্তানের অস্তিত্বই থাকে না। সুতরাং বঙ্গবন্ধু যে বেশ হিসেব করে ছ দফা পেশ করেছিলেন সে কথা বলাই বাহুল্য। এই ছ’ দফার ব্যাপারে শেখ মুজিবের নিরাপোষ থাকার পেছনে একটা প্রধান কারণ ছিল যে তিনি প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন।

সেমিনারের অপর বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তযোদ্ধা ড নুরান নবী। ড নবী প্রত্যক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা সম্বলিত সর্ব শেষ যে বইটি লেখেন , সেই বুলেটস অফ নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ানকে অবলম্বন করে তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ও ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি মুক্তিযু্দ্ধে তৎকালীন বৃহৎ শক্তিগুলির ভূমিকাও মূল্যায়ন করেন।

এই সেমিনারে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ প্রধান জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ লিবারেশন আর্কাইভের এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং আশা ব্যক্ত করেন যে এই ধারাবাহিকতায় প্রবাসী বাঙালিরাও এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌছুতে দিতে পারবেন।

বাংলাদেশ লিবারেশন আর্কাইভের আয়োজকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান , এই আর্কাইভের সংগঠক শামিমা আখতার ডেইজি। সামগ্রিক ভাবে এই অনুষ্ঠান ওয়াশিংটনের বাঙালিদের উদ্দেশ্যে একটি ব্যতিক্রমি দৃষ্টান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG