অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডন মোজেনা হেরিটেজ ফাউন্ডেশানে বাংলাদেশ বিষয়ে ভাষণ দেন


গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বাংলাদেশ সফর করেন এবং দু দেশের মধ্যে সহযোগিতা সংলাপের সূচনা করেন যা কী না সন্ত্রাসদমন , ব্যবসা-বানিজ্য , মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন , খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ মোকাবিলার মতো বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে। এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডন মোজেনা গতকাল ওয়াশিংটন ডিসি’র হেরিটেজ ফাউন্ডেশানে মুল বক্তব্য রাখেন।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকর্মী আনিস আহমেদ। শুনুন তার রিপোর্ট।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা তাঁর ভাষণ দেওয়ার আগে হেরিটেজ ফাউন্ডেশানের দক্ষিণ এশিয় স্ট্রাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো্ লিজা কার্টিস , তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্জন এবং দেশটির সামনে কিছূ চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ।

তিনি বলেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রগতি যা বাংলাদেশকে আগামি এক দশকের মধ্যেই একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে পারে , ৯০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা সত্বেও ইসলামি উগ্রবাদ সেখানে শেকড় গাড়তে পারেনি , দেশটিতে সাড়ে দিন বছর আগে সফল গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সে দেশের সমাজে মহিলারা রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে সক্রিয়। তবে তিনি এ কথাও বলেন যে এর মানে এই নয় যে সব কিছুই ঠিক আছে সেখানে ।

লিজা কার্টিসের ভাষণের পর রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা , The United States & Bangladesh : A Promising Partnership এই শিরোনামে তাঁর মূল বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের গতমাসে বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপট তিনি তুলে ধরেন এবং বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কি ?

মোজেনা বলেন যে বাংরাদেশ হচ্ছে বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম দেশ এবং বিশ্বের চতুর্থ বড় মুসলমান অধ্যূষিত দেশ । দেশটি মধ্যপন্থি , সহিষ্ঞু ও ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক এমন এক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ , যা কীনা বিশ্বের সব চেয়ে গোলযোগপূর্ণ এলাকায় সহিংস ও উগ্রপন্থি স্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি তাঁর ভাষণে খাদ্য নিরাপত্তা এবং বানিজ্য ও বিনিয়োগের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা ও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন যে তাদের বানিজ্য ও রপ্তানীর ব্যাপারে আগ্রহ আছে। গত বছর তারা বাংলাদেশে তারা বাংলাদেশে প্রায় এক শ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানী করেছেন এবং সেটি হচ্ছে আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ্ । এবং এর ফলে খোদ যুক্ত রাষ্ট্রে ৮ থেকে ১০ হাজার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় উৎস। রাষ্ট্রদূত মোজেনা স্মরণ করিয়ে দেন যে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশে সব চেয়ে বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশ। তিনি আরো বলেন যে বাংলাদেশে তারা কিছু মূল্যবোধের ব্যাপারেও আগ্রহী যেমন মানবাধিকার , গণতন্ত্রকে সমর্থন করা , বাংলাদেশে মানবিক কার্যক্রম ও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের । যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৫৪৭ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। আরও ঘুর্নিঝড় কেন্দ্র তারা গড়ে তুলতে চান। রাষ্ট্রদূত মোজেনা বলেন যে সন্ত্রাসের পথ থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক দূরে ।

তিনি বলেন যে একটা সময়ে মনে করা হতো যে বাংলাদেশই বোধ হয় আফগানিস্তান হতে চলেছে । তিনি বলেন তার মতে এখন আর সেটা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা্র কারণে সহিংস জঙ্গিবাদ , সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নৌ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তাদের সঙ্গে কাজ করেছে।

তবে এই সব আশাবাদ সত্বেও রাষ্ট্রদূত মোজেনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এবং মানবাধিকার সম্পর্কে কিছু আশংকা ও ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন যে হিলারি ক্লিন্টন তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময়ে সেখানে মানবাধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। নাম ধরেই তিনি বিরোধী নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোজ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তার নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা। এ প্রসংগে গার্মেন্টস শ্রমি আমিনুল ইসলামের হত্যা সম্পর্কেও তিনি ক্লিন্টনের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত মোজেনা তাঁর ভাষণের শেষের দিকে বলেন যে তিনি বাংলাদেশকে ব্যাঙ্গল টাইগার হিসেবে দেখতে চান। তিনি আশা করেন সে দেশের গণতন্ত্র হবে টেকসই। কিন্তু বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে এবং তার ঐ স্বপ্ন পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

XS
SM
MD
LG