শরীফ উল হক
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় – ইউএসএআইডি এবং ভয়েস অফ আমেরিকা
‘অটিজম সচেতনতা থেকে সক্রিয়তা একীভূত সমাজ গঠনের শুভ বারতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী ২ এপ্রিল অষ্টমবারের মত পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করেছিল আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কথা বলেছিলাম, তরী ফাউন্ডেশনের পরিচালক মারুফা হোসেন এর সাথে। তরী ফাউন্ডেশন ছয় বছর ধরে কাজ করছে অটিজম নিয়ে। এর মধ্যে আছে, মানসিক কিংবা শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্যও রয়েছে ‘স্পেশাল স্কুলিং প্রোগ্রাম’।
দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে।
অটিজম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা নেই বললেই চলে। অটিস্টিক একটি শিশুকে নিয়ে বেশীরভাগ অভিভাবক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কি করবেন কার,কাছে যাবেন বুঝতে পারেন না। কারন তখন বাচ্চাগুলো আচরণে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। কোথায় গেলে সঠিক পরামর্শ পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে অধিকাংশ অভিবাবকরা অবগত নন।
বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অটিস্টিক শিশু ও কিশোরদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ভয়াবহ। একটি জরিপে দেখা যায়,প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিস্টিক হয়ে জন্ম গ্রহণ করে বা অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। ছেলেরা এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। ছেলে মেয়ের আনুপাতিক হার ৪:১। বুঝবেন কি করে, আপনার সন্তানের মধ্যে বিশেষ কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিনা? শারিরীক সমস্যা থাকতে পারে,খাবার গ্রহনে সমস্যা থাকতে পারে,টয়লেট ব্যবহারে সমস্যা থাকতে পারে। এছাড়াও হাটা চলা এবং মানসিক সমস্যাও দেখা যায়।
গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের ভাইরাস জ্বর, জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়েটিক গ্রহণ এবং বংশগত কারণ হচ্ছে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ। মারুফা হোসেন বললেন অভিবাবকদের জন্য। তিনি বললেন, প্রথমেই অভিবাবকরা যদি মেনে নেয় নিজের সন্তান বলে তাহলে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। তাদের প্রশিক্ষন দিয়ে সমাজে সবার সাথে চলার উপযোগী করে তোলার জন্য বাবা-মায়ের ভূমিকাই এখানে গুরুত্বপূর্ন।
অটিজম কোন অভিশাপ নয়। অটিস্টিক শিশুটিকে দূরে ঠেলে না দিয়ে বুকে টেনে নিন। সমাজের সবাই তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলে হয়ত সেই শিশু’টিই হয়ে উঠবে সবার সেরা। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে ২ জনের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষতা দেখা যায় । সমাজের প্রতিটি শিশুর সম-অধিকার নিশ্চিত করা আমাদেরই দায়িত্ব।