অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

৭১ এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া- পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক


বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান। (সৌজন্যে- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ)
বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান। (সৌজন্যে- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ)

পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, এর জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত, বললেন পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক, যুক্তরাষ্ট্রেরহাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক হোসেন হাক্কানি। তিনি জানিয়েছেন, তার মতো আরো অনেক পাকিস্তানি এটি সমর্থন করে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে হাক্কানি বলেন, আমি নিশ্চিত, আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি পাকিস্তানকে একাত্তরের অত্যাচারের জন্যআনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলতেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা হোসেন হাক্কানি বলেন, ক্ষমা চাওয়ার এই দাবি সবার, যারা বিশ্বাস করেন সমষ্টিগত ক্ষমা প্রার্থনা কষ্ট মোচন করে এবং দুই দেশের মধ্যে ভুলে ভরাঅতীতকে পেছনে ফেলে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্স-২০২১ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেনপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। আগের দিন এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।হাই ব্রিড প্ল্যাটফরমে বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুরেরসাবেক প্রধানমন্ত্রী গো চক তং এবং ইউনেস্কোর প্রাক্তন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা। সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ছাড়া বিদেশিদের মধ্যেসশরীরে উপস্থিত হোসেন হাক্কানিই ছিলেন একমাত্র বক্তা।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে হাক্কানি বলেন, ১৪ বছর বয়সে করাচিতে প্রথম ও শেষবার আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তখন থেকেই তার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। হোসেন হাক্কানি বলেন, ১৯৭০ সালেজাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। করাচি ন্যাশনাল পার্কের জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অধিকার, গণতন্ত্র ওন্যায্যতার দাবিতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের মানুষ রক্তক্ষয়ী সহিংসতা ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে হাক্কানি বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত বিশ্বের অন্যসব রাষ্ট্রেরজনগণের জন্য আদর্শ। ১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধাপীড়িত এবং এটি একটি জনবহুল দেশ। বন্যা, খরা ও যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, অযোগ্য আমলাতন্ত্র এবং ব্যাপক দুর্নীতি এদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে একটি দুর্দশার আবর্তে বন্দি করে রেখেছে।

কিন্তু এখন প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার হার, মাথাপিছু আয়ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেশি এমন পরিসংখ্যান দিয়ে পাকিস্তানি ওই কূটনীতিক বলেন, ১৯৪৭ সালের আগে ভারতের এবং ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের অংশ ছিল বাংলাদেশ। এ থেকে বোঝা যায়স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্য।

হাক্কানি বলেন, বঙ্গবন্ধু সহিংসতায় বিশ্বাস করতেন না। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরত আসার পর ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করেছিলেনতিনি। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই বিচার করার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ যাতে ভবিষ্যতে সংঘটিত না হয় সে বিষয়ে অপরাধীদের সতর্কবার্তা দেয়া হয়।

হাক্কানি বলেন, আমরা এমন এক সময় পার করছি যখন আন্তর্জাতিকভাবে সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এটা এমন একটি যুগ যখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে জাতিগুলোর অঙ্গীকারপেছনের দিকে ধাবমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানামুখী সংঘাত পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং বিশ্ব বিভিন্ন ব্লকে আবারো বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সকলকে স্মরণকরিয়ে দেয়া যে, শান্তিই হচ্ছে মানব উন্নতি ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং সহনশীলতাই শান্তির নিয়ামক।

XS
SM
MD
LG