অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তরুনদের ভাবনায় ডিজিটাল ব্লাড ডোনেটিং বা স্বেচ্ছায় রক্তদান


ব্লাডম্যান! শুনেই কি চমকে উঠলেন? না, এটা সিনেমা বা কমিকের কোন ভয়ংকর বা ভৌতিক চরিত্র নয়। এটা বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের অভিনব ডিজিটাল ব্লাড ব্যাংক এবং ব্লাড ডোনেটিং অনলাইন সংগঠন। যার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও রক্ত গ্রহীতাদের সংযোগ সৃষ্টি হয়।
‘ইউ ক্যান নট বি এ সুপারম্যান, ইউ ক্যান নট বি এ স্পাইডারম্যান, বাট ইউ ক্যান বি এ ব্লাডম্যান’- এই স্লোগান দিয়ে ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান জিসান তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক এই রক্তদান সংগঠন ‘ব্লাডম্যান’। ধরুন, আপনার কোন স্বজনের সাথে রক্তের গ্রুপ মিলছে না, তখন কি হবে? তখন পাশে আছে ব্লাডম্যান।
ব্লাডম্যানের মূল কাজ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে রক্ত গ্রহীতা ও রক্ত দাতাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেওয়া। রক্তের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে তাদের ফেসবুক পেজে। www.facebook.com/BloodmanBD এজন্য তাদের রয়েছে একটি কল সেন্টারও আছে ; যার নম্বর ০১৬২৭-২৬০৯৩৩। ব্লাডম্যানের ওয়েব সাইটে (www.bloodman.org) রিকোয়েস্ট ফরম (অনুরোধ পত্র) পূরণ করে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই বার্তা চলে যায় ‘ব্লাডম্যান’-এর কাছে।
এজন্য রক্ত গ্রহীতা বা তার পক্ষ থেকে জানাতে হবে রক্তের গ্রুপ ও হাসপাতালের অবস্থান। ব্লাডম্যানের আছে রক্তদাতাদের একটি বিশাল ডাটাবেজ, একটি কল সেন্টার, রক্ত গ্রহীতার কাছে রক্তদাতাকে পৌঁছে দিতে ফ্রি মোটর সাইকেল সুবিধা। যে কেউ রক্তের প্রয়োজনে কল সেন্টার নাম্বারে ফোন করলেই পাবেন রক্ত দাতাকে।

যারা রক্ত দিতে আগ্রহী তাঁরা কল সেন্টারে ফোন করে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। ব্লাডম্যান সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেয়। এই টাকাটি তাদের নিতে হয় কল সেন্টারের নির্বাহী ও বাইক চালকদের পারিশ্রমিক, অফিস ও আনুষঙ্গিক খরচ এর যোগান দিতে। ব্লাডম্যান কোনও দরিদ্র অসহায় রোগীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ রাখে না।
ব্লাডম্যান প্রতি মাসে রক্ত দাতাদের একটি সম্মানজনক কোট পিন প্রদানের মাধ্যমে ‘ব্লাডম্যান’ উপাধি দেয়।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ বর্তমানে ব্লাডম্যানের সদস্য সংখ্যা ২২ জন। স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। ২০,০০০ রক্তদাতা বা ডোনারের ডেটাবেজ আছে ব্লাডম্যানের পরিচালনা পর্ষদ এর কাছে। তাদের লক্ষ্য একটি ফিজিক্যাল ব্লাড ব্যাংক তৈরি করা এবং কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের রক্ত সংক্রান্ত তথ্য বা ডাটাবেইজ সংরক্ষণ করা। এই সংগঠন বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১৬ জন রোগীর রক্তের প্রয়োজন মেটাচ্ছে, যা রোগীদের জীবন বাঁচাতে দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ব্লাডম্যানের পরিচালনা পর্ষদ এর সদস্যরা জানান, প্রান্তিক মানুষদের সহযোগিতা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তাদের তথ্য অনুযায়ী, মানুষের কাছে রক্তদাতাকে পৌঁছে দিতে ৮ জন সহপ্রতিষ্ঠাতাসহ মোট ১৮৪ জনের একটি টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত তারা ২০,০০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে রক্ত দিয়েছেন ।
‘ব্লাডম্যান’ এরই মধ্যে অর্জন করেছেন গ্লোবাল লিডারশীপ এ্যাওয়ার্ড-২০১৬। অর্জন করেছে ব্র্যাক আহ্বান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ সম্মাননা।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম “ফেসবুক” অসাধারণ সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশে ব্লাডম্যান এর সাথে যুক্ত হয়েছে। তারা তাদের ওয়েবসাইটে তাদের সাইট ব্যবহারকারীদের জন্য যুক্ত করেছে ব্লাড গ্রুপ নামে একটি অপশন। স্ব ইচ্ছায় যে যে ফেসবুককে নিজের রক্তের গ্রুপ এর তথ্য জানাচ্ছে, তখন সেই তথ্যটি ফেসবুক সংরক্ষণ করছে। যখন কারও রক্তের দরকার হচ্ছে তখনই ফেসবুক নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে রক্ত গ্রহীতা ও রক্তদাতাদের যুক্ত করে দিচ্ছে। এছাড়া, বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকও নানা ভাবে “ব্লাডম্যান” কে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
শুরুটা কীভাবে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাহরিয়ার হাসান জিসান বলেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। কারো রক্তের প্রয়োজন হলে কোথাও সাহায্য চাইতেগেলে খাতা থেকে ব্লাড গ্রুপ দেখে ফোন নাম্বার খুঁজে জানানো হতো। ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন পড়ার কারণে তাদের নানা ডাটাবেজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। তাই তার মাথায় আসে ঢাকার কিছু লোকের রক্তের গ্রুপ, ফোন নাম্বার ঠিকানা ডাটাবেজে সংরক্ষণ করলে রক্তের ব্যবস্থা করা সহজ হবে। তার ভাবনার কথা ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই রিয়াজুল ইসলামকে জানান। তিনি সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা মানুষকে সহযোগিতা করেন। রিয়াজুল বিষয়টি গুরুত্ব অনুভব করে তাকে ৬০ হাজার টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরমাসে বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্লাডম্যান’। এর মেডিক্যাল সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা: মঞ্জুর। সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরও আছেন মোঃ মেহেদী হাসান নাঈম এবং নিয়াজ মাহমুদ।

আজমীর হাসান কনক, ঢাকা।


XS
SM
MD
LG