শরীফ উল হক,
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায় – ইউএসএআইডি এবং ভয়েস অফ আমেরিকা
বেঁচে থাকার জন্য প্রধান উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন। বিশুদ্ধ বাতাসের ২০.৯৪ শতাংশ হচ্ছে এই অক্সিজেন। সাথে ৭৮.০৯ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণ থাকে ০.৯৭ শতাংশ। কিন্তু নিশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় এই বাতাস হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে বিষাক্ত। বিশ্বের ৯১টি দেশের দেড় হাজারেরো বেশী শহরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত জরিপে দেখা যায় দূষণের মাত্রায় ঢাকা চতুর্থ। অ্যামোনিয়া, কার্বন নাইট্রেট ও সালফেটের ক্ষুদ্রকণার সমন্বয়ে গঠিত পিএম ২.৫। ঢাকার বাতাসে পিএম ২.৫ সহনীয় মাত্রার চেয়েও অনেক বেশী। এর ফলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, উচ্চরক্ত চাপ,অবসাদ, ফুসফুসে প্রদাহ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এর শিকার সবচেয়ে বেশী হয় শিশু এবং বয়ষ্করা। শিশুদের ফুসফুসের প্রদাহ সাথে সাথে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় দেখা যাবে পরিপূর্ন সুস্থ্য মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।
এই খবর মোটেও সুখকর নয় আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য বললেন ডা.ফারজানুল আহমেদ। শহরের চারপাশে গড়ে উঠা কলকারখানা এবং ফিটনেস বিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া সাথে মরার উপর খাঁড়ার ঘা শুষ্ক মৌসুমে রাস্তা খোড়াখোড়ি। বাতাসে উড়ছে ধুলি সাথে নাম না জানা অদৃশ্য জীবাণু। নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যাচ্ছে ফুসফুসে। কমে যাচ্ছে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা। গ্যাস এবং তাপমাত্রায় পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। প্রতিবছর ১৫ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র এই দুষিত বায়ুর কারণে। এই তথ্য বিশ্ব ব্যাংকের।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড.আইনুন নিশাত বললেন, বাংলাদেশের জন্য এখন বড় সমস্যা হচ্ছে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন। যথাসময়ে বৃষ্টি কিংবা খড়া হচ্ছে না এবং ঋতু পরিবর্তনের সময়ও আগের মত নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির প্রধান সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বললেন, উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরনের টাকা বাংলাদেশ’সহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যেন প্রাপ্য হিসেবে দেয়া হয়। দান কিংবা সাহায্য হিসেবে যেন এটা বিবেচিত না হয় তার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।
বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রাম ধুলিকণা সহনীয় বলে ধরা হয়। কিন্তু ঢাকার বাতাসে ধুলিকণার মাত্রা ২৫০ মাইক্রোগ্রাম, যা স্বাভাবিকের চেয়েও পাঁচ গুন বেশী। এর সঙ্গে রয়েছে বিষাক্ত ধাতব যৌগ সিসা, পারদ, ম্যাঙ্গানিজ, আর্সেনিক, নিকেল ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বেঞ্জিন, ফরমালেডেহাইড, পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনাইল, ডক্সিন ও অন্যান্য অদ্রবীভূত জৈব যৌগ।
ঢাকার বাতাসে ২০১১ সালে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬২৮.১২ মাইক্রোগ্রামে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইডের অস্তিত্য পাওয়া যায়। ক্রমেই এই হার বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী প্রতি কিউবিক মিটার বাতাসে ২.৫ মাইক্রোনের ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ও ১০ মাইক্রোনের ১৫০ মাইক্রোগ্রাম কণা সহনীয়।
২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সপ্তম জনবহুল শহরের তকমা লাগার অপেক্ষায় ঢাকা। মানব সৃষ্ট এই দূষণ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে হবে আমাদেরই। এই দূষণে বেড়ে উঠছে বর্তমান, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এর মাঝেই বেড়ে উঠবে ভবিষৎ। যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।(তথ্যসূত্র- দৈনিক যুগান্তর,২২মে ২০১৪)