পৃথিবীর মানুষের মধ্যে কেউ কর্মক্ষম আবার কেউবা অক্ষম । আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞানুযায়ী,যিনি তার স্বীকৃত মানসিক কিংবা শারিরীক ক্ষতির কারনে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয় । এদের মধ্যে অনেকেই এই অক্ষমতাকে জয় করে অর্জন করেন এক কর্মমূখর জীবন ।
সিরাজগঞ্জের সানজিদা আক্তার তেমনই একজন যাকে শারিরীক অক্ষমতা দমিয়ে রাখতে পারেনি । মাত্র সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে যার পা সহ কোমড়ের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যায় । তারপর থেকেই নিজ চেষ্টা এবং পরিবারের সবার সহযোগিতায় এসএসসি পাশ করে ব্যবসা শুরু করেন এবং হাল ধরেন পরিবারের । আজ সানজিদার পরিবার স্বাবলম্বী ।
‘একীভূত সক্ষমতার ভিত্তিতে সকল প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্যে এ বছর পালিত হল ২৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস । উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নতি সাধন ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ভাগ প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে আছে । যারা চাকরী,স্বাস্থ্য,সামাজিক ও শিক্ষার সুবিধা হতে এখনো বঞ্চিত ।
দিবসটি ঊপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন । রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘প্রতিবন্ধীদের পেছনে ফেলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় তাদেরকে সম্পৃক্ত ও একীভূত করতে হবে । তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে । বিশ্বায়নের এই যুগে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে পারবেন । ফলে তারা দেশের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবেন’।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানববৈচিত্র্যেরই অংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশ যেমন এমডিজিতে সাফল্য অর্জন করেছে তেমনি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল মানুষের স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি’তেও বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করবে । এসডিজিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ প্রতিবেদন রাখা হয়েছে । যেখানে বলা হয়েছে ‘কেউ যেন সমাজে পিছিয়ে না থাকে’। এছাড়াও তাঁর সরকার দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ।
জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম সহ বেসরকারী সংস্থাসমুহ দেশব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে দিবসটি পালনে । এর মধ্যে রয়েছে র্যালী,আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও সেবা নিয়ে । ফাউন্ডেশেনের কনসালট্যান্ট ডা রাজিব আলম জানিয়েছেন সব ধরনের শারিরীক এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবা, সঠিক দিক নির্দেশনা এবং সাহায্য করা হয়ে থাকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ।
কোন দূর্ঘটনা কিংবা জন্মগত ভাবে কেউ কেউ স্বীকার হন প্রতিবন্ধীতার । সীড এর নির্বাহী পরিচালক দিলারা সাত্তার বললেন,এটা তাদের দোষ না । তাই তাদের অবহেলার চোখে না দেখে আমাদের উচিত সাহায্যের হাত বাড়িতে দেয়া । যেন তারাও যাপন করতে পারে স্বাভাবিক জীবন ।
শরীফ-উল-হক,
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার।
সহযোগিতায়- ইউএসএআইডি এবং ভয়েস অব আমেরিকা।