অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও বিশ্লেষন


ঘোর দুষমন প্রতিবেশি দু’দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুলভাবে সর্ব সাম্প্রতিক গোল বেধেছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তা হ’লো ভারতীয় সেনারা সীমান্তের ওধারে গিয়ে কাশ্মীরে, সন্দেহভাজন বেশ ক’টি সন্ত্রাসী শিবিরে চড়াও অভিযান চালিয়েছে কিনা তা নিয়ে। ভারত বলছে তাদের বিশেষ বাহিনী বেছে বেছে সন্দেহজনক লক্ষগুলোতে অভিযান চালিয়েছে গেলো সপ্তাহে- পাকিস্তান বলছে, মিথ্যে কথা, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ওদের পাকিস্তানে ঢোকার প্রশ্নই ওঠে না। বিস্তারিত শোনাচ্ছেন সরকার কবীরুদ্দীন।

হিমালয়ের দূর্গম ঐ পাহাড়ি অঞ্চলে আসলেই কি ঘটেছে না ঘটেছে, তা নিশ্চিতভাবে জানতে পারা চাট্রিখানি কথা নয়। দু’পক্ষই ঐ এলাকায় পরস্পর আঘাত প্রত্যাখাতের দাবি করেছে অতীতে বহুবার এবং ঐরকমের গুলিগোলা চলার ঘটনা অস্বাভাবিকও কিছু নয়। তবে একটা কথা নিশ্চিতভাবেই জানা গিয়েছে ঠিকই তা হলো যে, সেপ্টেম্বরের আঠারো তারিখে ভারতীয় কাশ্মীরের এক সেনা চৌকির ওপর চালানো হামলায় বিশ সৈনিক নিহত হবার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শক্তভাবে পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত দেন। নতুন দিল্লি ঐ হামলার জন্যে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিদেরকে দোষারোপ করেছে।

বলা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে ভারত, তার প্রতিবেশি-প্রতিদ্বন্দী রাষ্ট্রটির ওপর কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল তালাশ করবে যে, সন্দেহ নেই তাতে। কেননা সীমান্তের ওধার থেকে ইসলামপন্থী জঙ্গিরা নিরন্তর অভিযান চালিয়ে আসছে ভারতকে নিশানা করে, এ অভিযোগ তো চলে আসছেই বহূ কাল যাবত। তবে এখন জলপ্রবাহ কেন্দ্রীক যে বিরোধের উদ্ভব ঘটতে চলেছে তা নিয়ে সহিংসতা আরো উৎকট রূপ পরিগ্রহ করতে পারে, এ সংশয় বিশ্লেষকদের মনে।নতুন দিল্লির গবেষনা সংস্থার প্রধান সমীক্ষা বিভাগীয় কর্তাব্যক্তি হার্ষ পান্ত মনে করেন, বেশ কয়েকবারের সন্ত্রাসী হামলার পর অতীতের নীতিভঙ্গির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই নীতিকৌশলের বুনিয়াদী এ মোড়বদলের সিদ্ধান্ত।বলেন বাগাড়ম্বতায় কাজ হবে না। পাকিস্তানের গায়ে আঁচ লাগবে, এরকম কিছুই করা দরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যে প্রত্যাঘাত করতে পারে, সীমান্ত পেরিয়ে চালানো হামলা, সেটা প্রমান করতেই করা হয়েছে। এতদিন সহিংসতা না পরমানু মুখি হয়ে পড়ে সে দুশ্চিন্তার কারনেই ভারত বেশি দূর এগুতে চায়নি তবে প্রচলিত প্রতিনিবৃত্তকরনে যে কাজ হবার নয় সেটাও এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করে পান্ত।

ভারতের ওপর জঙ্গি হামলা চালাতে পাকিস্তান মদত দিচ্ছে, ভারতের এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তান বলছে, এ ঐ ভারতীয় কাশ্নীরে কথিত মানবাধিকার পদদলিত হওয়ারই পাল্টা প্রতিক্রিয়া বই অন্য কিছু নয়।

ভারত কিন্তু এ অসন্তোষ চারিয়ে তোলায় ধোঁয়া দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করার হূমকি দিচ্ছে। এবং এ উদ্যমের প্রথম শিকার সার্ক শীর্ষ বৈঠক। শুধু এবারই সার্ককে ধরাশায়ি করা নয়, দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো রাষ্ট্র ভারত এর আগেও বেশ কয়েক বারই পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক একটি ফোরাম গড়বার সম্ভাব্যতা নিয়ে চিন্তা করেছে।

নতুন দিল্লির পলিসি রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষক ভারত কার্নাড বলছেন, পাকিস্তানকে দক্ষিন এশিয়ার গন্ডী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবার চিন্তা-চেতনা বাস্তবমুখি নয় যেমনি, তেমনি সাংষ্কৃতিক পটভূমিতেও তেমনটি চাক্ষুষ করবার কোন অবকাশ নেই।

অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পাকিস্তানকে নিশানা করবার কথা চিন্তা করছে ভারত। ১৯৯৬ সালে সবচেয়ে সুবিধে প্রাপ্ত দেশের তালিকায় পাকিস্তানকে মোস্ট ফেভার্ড নেশান রুপে যে চিহ্নিত করে ছিল ভারত প্রধানমন্ত্রী এখন সেদিকটাও পূনর্বিবেচনা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অবশ্য দু’দেশের বানিজ্য এতো ক্ষুদ্রাকৃতির যে ওতে কোন কাজ হবে না, তেমনটিই মনে হয়।

তবে সবচেয়ে বেশি করে ভাবা হচ্ছে যে দিকটা নিয়ে তা হলো ১৯৬০ সালের সিন্ধুনদের জলপ্রবাহ চুক্তিটি। যার আওতায় হিমালয় হতে উৎসারিত তিন জলধারার বেশির ভাগ জলপ্রবাহই পাকিস্তানকে দেবার বিষয় মঞ্জুর করা হয়েছিলো। ভারত বলছে- ঐ তিন জলধারার পাশে পাশে জলবিদ্যুত ড্যাম গড়াসহ বিকল্প বিষয়াদি পর্যালোচনা করবে তারা, যাতে করে পাকিস্তানের পানিপ্রাপ্তিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সহসাই এটা করা যাবে, তেমনটি নাও হতে পারে। ড্যাম বানাতেও তো সময় লাগে কয়েক বছর, তবে এ নিয়ে পাকিস্তান কিন্তু সন্ত্রস্ত। ইতিমধ্যেই বলছে, চুক্তি বাতিল তো যুদ্ধ ঘোষনার শামিল।

ভারত বলছে, না না চুক্তি বাতিল করা হবে না। দু’দুটো যুদ্ধের আঘাত তো সয়েইছে এ চুক্তি, ভাঙ্গেনি তো, মচকায়ও নি দু’দেশের তিক্ত সম্পর্কের তুষানলেও। তবে হ্যাঁ, অতীতে যাই করা হয়নি, তেমন কিছু কৌশল অবলম্বন করা হতেও পারে। বিশেষ করে দু’বছর আগে ক্ষমতারোহনের পর নরেন্দ্র মোদী যে সুহৃদ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার বদৌলতে ভিন্নতরো কোন কিছু এখতিয়ারের সুযোগটা কিছু বিস্তৃত হয়েছে বলেই বিশ্বাস বিশেষজ্ঞ জনদের।

ইতিমধ্যে, উত্তেজনা প্রশমনের কোন লক্ষন সংঘাত এলাকায় পরিদৃষ্ট হচ্ছে না এখনো। রবিবার রাতে কাশ্মীরের উত্তরাংশে ভারতীয় সেনা শিবিরে ছয় জঙ্গির হামলার খবর শোনা গিয়েছে। ভারত তার সীমান্তবর্তী শত শত গ্রাম থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছে। এক সীমান্ত প্রহরী প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অপর একজন, সীমান্ত পারের গুলিবর্ষন দু’ধার থেকেই চলছে। তবে দু’তরফই যে উত্তেজনা প্রশমিত করতে চায় সে আভাস ইঙ্গিতও মিলছে পাশাপাশি। সোমবার গত দু’সপ্তাহের ভেতর এই প্রথম উত্তেজনা দেখা দেবার পর, দেশ দু’টির নিরাপত্তা পরমর্শকেরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছেন।

XS
SM
MD
LG