সিরিয়ায় সম্প্রতি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ , সেখানে উপর্যুপরি বিমান অভিযান এবং ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ নিয়ে এক ধরণের আন্তর্জাতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নেটো এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই হস্তক্ষেপে রাশিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছে। এ সম্পর্কেই ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটর , গভর্ণমেন্ট ও পলিটিক্স বিভাগের প্রধান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভয়েস অফ আমেরিকার আনিস আহমেদের সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে রাশিয়ার এই অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখা । তিনি বলছেন যে দেশের একটি বড় এলাকায় সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। একটা অংশ বিদ্রোহীদের দখলে ছিল এবং আরেকটা অংশ আই এস এর দখলে। তিনি বলেন এ কথা সত্যি আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে , সে অভিযান আবার খানিকটা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ও যাচ্ছে। অধ্যাপক রীয়াজ আরও বলেন যে গত কয়েকদিন ধরে রুশ বিমান সে সব স্থানেই জোর অভিযান চালায় যে সব জায়গায় আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের প্রতি রুশ সমর্থন ও ক্রাইমিয়ার অধিগ্রহণ এবং এ ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাহ্যত নির্লিপ্ততা কি রাশিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তারে উৎসাহিত করেছে কী না এই প্রশ্নের জবাবে ড. আলী রীয়াজ বলেন যে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি একটি কারণ হতে পারে । তবে সব চেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে যে রাশিয়ার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হচ্ছে সিরিয়া, সেখানে দুটি বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আসাদ সরকারের পতন ঘটলে রাশিয়া সেখানে তার শক্ত ঘাঁটি হারাতে পারে , সে রকম একটা আশঙ্কাতো রয়েছেই। আর সেই বিবেচনাটাই এখানে রাশিয়ার জন্য প্রধান বিষয়। তবে এটা ঠিক ইউক্রেন সমস্যা না হলে , বিষয়টি সিরিয়ায় রাশিয়া দ্বিতীয় বার বিবেচনা করে দেখতো।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ স্মরণ করিয়ে দেন যে ইসলামি স্টেটের উপস্থিতির ব্যাপারটা কেবল মাত্র সিরিয়ায় নয় , প্রধানত এটা ইরাকেই । কাজেই ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যারা অভিযান চালাতে চায় তাদের চূড়ান্ত লড়া্ইটা করতে হবে ইরাকেই । আর সে জন্য ইরাকের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন যে ইরাক , ইরান ও সিরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে তথ্য বিনিময় করলে এতে তিনি ভুল কিছু দেখেন না, এমন কী এই তথ্য বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর সঙ্গে যোগ দিতে পারে। জাতিসংঘে পুতিন ও ওবামার মধ্যে আলোচনায় ও তথ্য বিনিময় সম্পর্ক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অধ্যাপক রীয়াজ বলছেন কেবল মাত্র বোমা বর্ষণ করে যুদ্ধ শেষ হবে না । তিনি মনে করেন এই যুদ্ধ স্থলযুদ্ধে পরিণত হতে পারে এবং এটা দেখার বিষয় ঐ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কারা স্থল যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধেই রাশিয়া জড়িয়ে পড়েছে বলে ড আলী রীয়াজ মনে করেন।