অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইরানের সঙ্গে পারমানবিক চুক্তির প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা


সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের পাঁচটি শক্তি ধর রাষ্ট্রের স্বাক্ষিরত পারমানবিক চুক্তি, এক ধরণের স্বস্তি এনে দিয়েছে বিশ্বে, কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যেই নয় , পশ্চিমি দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে যে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে সেই সম্ভাবনা ক্রমশই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বিশ্বে, বিশেষত ঐ অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা যে হ্রাস পাবে এবং বিশ্ব যে আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে সে রকম পরিস্কার একটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। তবে এই আশাবাদের পাশাপাশি, এই চুক্তির বিরোধীতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেমন, তেমনি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও। ইসরাইল তো প্রকাশ্যেই এই চুক্তির বিরোধীতা করেছে, সৌদি আরব এই চুক্তি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছে আর যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসে রিপাবলিকান সদস্যরা এই চুক্তি অনুমোদনের পক্ষে নন। তাঁরা চেষ্টা করবেন চুক্তিটি যাতে কংগ্রেসের অনুমোদন না পায়। এই সব বিরোধীতার মুখে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিন্তু এই চুক্তির ইতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে অনেক বেশি আশাবাদী:

প্রেসিডেন্ট বলছেন এই চুক্তি ছাড়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর জন্য কোন সর্বসম্মত সীমা থাকতো না। আর এই অবস্থায় এমন সম্ভাবনাই দেখা দিতো যে ঐ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ও তাদের নিজেদের পারমানবিক কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হতো। এর ফলে সব চেয়ে সমস্যাসঙ্কুল ঐ অঞ্চলে পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার হুমকি দেখা দিত।

তবে এই চুক্তির বিরোধীরা বলছেন যে এর ফলে ইরানকে পারমানবিক অস্ত্র তৈরি থেকে শেষ পর্যন্ত নিবৃত্ত রাখা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবিলকান সেনেটর , যিনি আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান তিনি বলছেন যে ইরানের সঙ্গে এই চুক্তি বড় জোর ইরানের পারমানবিক অস্ত্র নির্মাণ সাময়িক ভাবে স্থগিত করবে কিন্তু চূড়ান্ত ভাবে তা বন্ধ হবে না। কংগ্রেসে ষাট দিনে চুক্তি পর্যালোচনার যে সুযোগ রয়েছে , সেখানে রিপাবলিকানরা চুক্তির বিরোধীতা করবেন তবে সে ক্ষেত্র ইম ওবামা যে তাঁর ভিটো অধিকার প্রয়োগ করবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই । আর মি ম্যাকেইনও এ কথা স্বীকার করেছেন , প্রেসিডেন্টের ভিটোকে নাকচ করার মতো সমর্থন তাঁর ডেমক্র্যাটদের কাছ থেকে পাবেন না। ইরানের সঙ্গে পারমানিবক চুক্তির নানান দিক নিয়ে কথা বলছিলাম Editorial Research & Reporting Associates এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চীনের Guangdong University of Foreign Studies এর Visiting Professor, Arnold Zeitlin এর সঙ্গে।

Arnold Zeitlin এর মনে করেন যে এই চুক্তিটি হচ্ছে একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সূচনা। তা হলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে, বিশেষত রিপাবলিকানরা কেন এই চুক্তির বিরোধীতা করছেন, এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিল জাইটলিন বলছেন যে দুটি কারণ রয়েছে। যারা ওবামাকে পছন্দ করেন না তারা এমনিতেই এর বিরোধীতা করছেন আর দ্বিতীয়ত তারাও এর বিরোধীতা করছেন যারা মনে করেন যে এতে ইসরাইল হুমিকর সম্মুখীন হচ্ছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতেনইয়াহু এরই মধ্যে বলেছেন য ইরানের সঙ্গে এই চুক্তি হচ্ছে, তাঁর কথায়, একটি ঐতিহাসিক ভুল এবং যুক্তরাষ্টে্র যাতে এই চুক্তি অনুমোদন লাভ না করে তিনি সেই চেষ্টাও চালাবেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডও বলেছেন ইসরাইল ইরানের সঙ্গে কোন চুক্তি চায় না, চায় স্থায়ী অচলাবস্থা । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতে ইসরাইলের আতঙ্কিত হবার কি কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। আর্নল্ড জাইটলিন বলেছেন ইসরাইলতো নিজেই পারমানবিক শক্তি এবং ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রথম পারমানবিক শক্তি। ইরানেরও তো এখনও পারমানবিক শক্তি নেই।

এই চুক্তি সম্পর্কে একটি কথা প্রায়শই উঠে আসে যে চুক্তিটি সামগ্রিক নয় , সম্পন্ন নয়। অন্য আরও অনেক ইস্যু রয়ে গেছে, যেমন ইরানের নিজস্ব কিছু সন্ত্রাসী কার্যক্রম এই চুক্তিতে বিবেচনা করা হয়নি , যেমন মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াপন্থিদের উস্কানী দেবার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে । এ সম্পর্কে জাইটলিন বলছেন এই চুক্তি হচ্ছে প্রধানত পারমানবিক চুক্তি । এই চুক্তির আওতায় কিন্তু সব কিছু আসবে না। তবে যুক্তরাষট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও উন্নত হলে, কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে অবশ্যই অন্যান্য বিষয়েও নিস্পত্তি হবে। তবে তিনি এ কথা বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু লক্ষ্য বস্তুর সঙ্গে ইরানের মিল রয়েছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কিছু অভিন্ন দিক ও আছে। এই প্রসঙ্গে আর্নল্ড জেটলিন বলেন যেমন ধরুন আফগানিস্তানের ব্যাপারে ইরানের আগ্রহ রয়েছে কারণ আফগানিস্তান হচ্ছে ইরানের প্রতিবেশী। আর এটা তো ভাবাই যায় না যে ইরান আফগানিস্তানে সুন্নি ইসলামিক স্টেটের প্রসার দেখবে । সেই অর্থে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয়রই আফগনিস্তানে একটি অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আর সে কথাটা ইরাকের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য। ইরান সমর্থিত বাহিনী ইরাকে বাহ্যত আইসিসের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করছে। সেটা হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্ক। তিনি এবং অন্যান্য ভাষ্যকারেরা ও মনে কেন যে স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটের এই প্রসার রোধ করতে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী শক্তি হিসেবে বড় রকমের ভূমিকা পালন করতে পারে।

please wait

No media source currently available

0:00 0:05:14 0:00

XS
SM
MD
LG