অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে এফবিআই পরিচালকের শুনানী


এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটারে করা টেলিফোনে আড়িপাতার অভিযোগ সম্পর্কে বলেছেন, এর পক্ষে কোনো প্রমান মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে এফবিআই তদন্ত বিষয়ে হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির শুনানীতে জেমস কোমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটার বার্তা নিয়েও কথা বলেন। ক্যাথরিন জিপসনের রিপোর্ট থেকে তথ্য নিয়ে, আলোচনা করছেন রোকেয়া হায়দার ও সেলিম হোসেন।।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে তাঁর প্রচারণা বিষয়ে ট্রাম্প টাইওয়ারে টেলিফোনে আড়িপাতার অভিযোগ নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, সোমবার থেকে তা নতুন মোড় নিয়েছে। হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রথমবার অনুষ্ঠিত শুনানীতে জেমস কোমি বলেছেন, এর পক্ষে কোনো প্রমান মেলেনি।

“ওই টুইট বার্তা সমর্থন করে এমন কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। এবং আমরা এফবিআইতে তা অতি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখেছি”।

জনসমক্ষে প্রথমবার নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করবার সুযোগ পেলেন এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি। বললেন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বা সম্পৃক্তার বিষয়ে তদন্তের মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে ট্রাম্প প্রচারণার সঙ্গে রাশিয়ার যে কোনো ধরনের যোগাযোগের বিষয়ে তথ্য যোগাড় করা।

“এফবিআই আমাদের গোয়েন্দা অভিযানের অংশ হিসাবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছে”।

জেমস কোই তদন্তের বিশেষ বিশেষ দিক তুলে ধরে বলেন, “কোনো ধরনের অপরাধমূলক কিছু হয়েছে কিনা তাও এই তদন্তের মধ্যে রয়েছে”।

শুনানীতেই তিনি সকলের সামনে বলেন তদন্তের স্বার্থে তিনি খোলাসা করে সব বলতে সমর্থ নন; “এটি একটি উন্মুক্ত চলমান তদন্ত প্রক্রিয়া; এর চেয়ে বেশী কিছু আমি বলতে পারবো না”।

দীর্ঘ সময় ধরে অনুষ্ঠিত শুনানীতে তদন্তের কিছু দিক উঠে আসে। এরই সূত্র ধরে প্রশ্ন উত্তরের এক পর্বে জেমস কোমি বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট করা বার্তায় যে অভিযোগ করা হয় তার কোনো প্রমান মেলেনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের, ট্রাম্প টাওয়ারে আড়িপাতা বিষয়ক প্রেসিডেন্ট ওবামার বিরুদ্ধের অভিযোগ প্রমানের সমর্থনে কোনো প্রমান নেই এফবিআই পরিচালক কোমির পরিস্কার এই বক্তব্যের পরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র শন স্পাইসার।

স্পাইসার বলেছেন, “শুনানী শুরু হয়েছে মাত্র। অব্যাহত থাকবে। আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, আরো অনেক তথ্য উঠে আসবে”।

গত সপ্তাহে হোয়াই হাউজ বলেছে প্রেসিডেন্ট ওবামা ট্রাম্প টাওয়ারে আড়িপাতায় বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থার শরনাপন্ন হয়ে থাকতে পারেন। তবে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিচালক মাইকেল রজার্স বলেছেন তেমনটি ঘটেনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর আড়িপাতার অভিযোগ তুলে নেবেন না। এফবিআই পরিচালক জেমস কোমে ছাড়াও হাউজ স্পিকার পল রায়ান এবং সেনেট ও কংগ্রেসে শীর্ষ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট আইনপ্রনেতারা বলছেন ৪ঠা মার্চে প্রেসিডেন্টের করা ওই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমান মিলছে না।

এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমর্থক এ্যাটর্নী জেনারেল জেফ সেশনস পর্যন্ত বলেছেন আড়িপাতার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ডেমোক্রেট দলীয় আইনপ্রনেতারাও এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তার বিরোধীতা করে আসেছেন। যেমনটি বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি এ্যাডাম স্কিফ; “প্রেসিডেন্ট ওবামা একতরফাভাবে যার তার ওপর আড়িপাতার আদেশ দিতে পারেন না। কোনো প্রেসিডেন্টই তা পারেন না”।

কিন্তু একথায় স্বস্তি পাচ্ছেন না রিপাবলিকানরা। তারা ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প প্রচারনায় আড়িপাতা হয়েছে বলে অব্যহত রেখেছেন তাদের অভিযোগ। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস প্রতিনিধি ডেভিন নুনেসের বক্তব্য শোনা যাক।

“হতে পারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অন্য ধরণের নজরদারী করা হয়েছিল”।

তারা বলছেন তারা সেই বিষয়টি জানতে পেরেছেন অনেক পরে। নিউইয়র্কের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান পিটার কিং বললেন, “সরকারের মধ্যের লোকজনই তথ্য ফাঁস করে অপরাধ করেছে- ফলে অবশ্যই অপরাধ হয়েছে।”

তথ্য ফাঁসের ঘটনা সত্য, শুনানীর কয়েক ঘন্টা আগে টুইটার বার্তায় প্রেসিডেন্টের মতে, রিপাবলিকানরা বিদেশী হস্তক্ষেপের বিষয়ে কম কথা বলছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য ফাঁসসহ নানা বিষয় নিয়ে গনমাধ্যমের খবরের কথা বেশি আলোচনা করছেন। দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস প্রতিনিধি ট্রে গডির মতে “ইন্টারসেপ্টেড ফোন কলের অস্তিত্ব সম্পর্কে একজন রিপোর্টার কিভাবে জানবে?”

গত অক্টোবর থেকে চলা এফবিআই তদন্ত বিষয়ে প্রথম শুনানীতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের মধ্যে একটি ব্যাবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ সম্পর্কে কোমির শুনানীর শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন রাশিয়া তাঁকে নির্বাচনে জিততে সহায়তা করেছে এটি ডেমোক্রেটদের বানানো অভিযোগ। নির্বাচনে হেরে গিয়ে তারা এ অভিযোগ করছেন।

টুইটারে ট্রাম্প আরো বলেছেন ওবামার অধীনে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার ওবংং অন্যান্যরা বলেছেন যে তিনি যে মস্কোর সহায়তা পেয়েছেন, তার কোনো প্রমান নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “এই খবরটি অস্যত্য এবং সকলেই তা জানে”।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন ডেমোক্রেটরাই রাশিয়ার হস্তক্ষপের গল্প ফেঁদেছেন। আসল গল্প হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন তথ্য ফাঁস। কংগ্রেস এফবিআই ও অন্যান্যদের সেটি খুঁজে বের করা উচিৎ। তথ্য ফাঁসকারীকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। তিনি তথ্য ফাঁসের কথা অনেকবার বলেছেন এবং বলেছেন এর কারনে তাঁর কাজকর্মের ওপর এটি ছায়া পড়ে থাকছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট প্রতিনিধই এ্যাডাম স্কিফ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্ভাবনায় ফেলার জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়ার মতো সৎসাহস ও মনোবল রয়েছে; শুধু প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে নয়, বরং সমগ্র আমেরিকানদের কাছে।”

আগামী সপ্তাহে ইন্টেলিজেন্স কমিটির দ্বিতীয় শুনানীতে সবকিছু ষ্পষ্ট হয়ে আসবে বলে ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা।

XS
SM
MD
LG