অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউটিউবের কার্যক্রমগুলিতে শিশু তারকাদের উত্থান কিছু উদ্বেগের সৃষ্টি করছে


ছোট বাচ্চাদের জন্য নির্মিত মজাদার ভিডিওগুলি ইদানীং ইউটিউবে খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই শিল্পের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠে নি। সমালোচকরা জানাচ্ছেন যে, এর ফলে পর্দার দু দিকের শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা মিশেল কুইনের প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, ইউটিউবে সম্প্রচারিত শিশুদের দ্বারা অভিনীত কতিপয় অনুষ্ঠানের মধ্যে যেটি এখন শীর্ষস্থান অধিকার করে রয়েছে, তার নাম ‘দ্য রায়ান’স ওয়ার্ল্ড‘। এতে অভিনয়ের সূত্রে,যার নাম সামনে উঠে এসেছে, সে হল নয় বছর বয়স্ক রায়ান কাজী।

শিশু তারকা রায়ান কাজী গত তিন বছর ধরে ইউটিউবে শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে, তবে এতে গর্বিত হওয়া ছাড়া কিছু উদ্বেগের কারণও দেখা যাচ্ছে। নয় বছর বয়স্ক তারকা রায়ান কাজীর অভিনীত অনুষ্ঠান, দ্য রায়ান’স ওয়ার্ল্ড’ ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেলে ২৯ মিলিয়ন অর্থাৎ দুই কোটি ৯০ লক্ষ গ্রাহক হয়ে গিয়েছে। ফোর্বস সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী,এই বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের মাধ্যমে রায়ান এবং তার পরিবার বিজ্ঞাপন বাবদ বার্ষিক কয়েক লক্ষ ডলার উপার্জন করতে পারছেন। গত তিন বছর ধরে রায়ান ইউটিউবে শিশু তারকাদের শীর্ষে অবস্থান করছে। এককথায় বলা যায় শিশু তারকাদের এই উত্থান, ইউটিউবের কার্যক্রমগুলিতে এক নাটকীয় মোড় এনে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লাস ভেগাসে অবস্থিত নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক বেঞ্জামিন বারোজ বলেন,“লক্ষ লক্ষ দর্শকেরা এই অনুষ্ঠানগুলি দেখছেন,মতামত দিচ্ছেন, শিশুরা ব্যস্ত থাকছে বিভিন্ন খেলনায়,চ্যানেলগুলিতে চলছে অনেক ধরণের খেলনা নিয়ে পর্যালোচনা। ইউটিউবের নিজস্ব চ্যানেল যারা চালায় তারাও এইসব খেলনা এবং ব্র্যান্ড নিয়ে চর্চা চালাচ্ছে নিজেদের চ্যানেলে।”

please wait

No media source currently available

0:00 0:03:56 0:00
সরাসরি লিংক

২০০৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে,ইউটিউব বিশ্বব্যাপী মানুষকে একটি সুযোগ দিয়েছে যা অনেকটা স্বপ্নের মতো, একটি ক্যামেরার সাহায্যে আপনি আপনার দর্শকদের কাছে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারছেন। তার ফলে জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে শিশুরা তাদের পরিবারের সাথে মিলে ভিডিও তৈরি করছে, এবং খেলনা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ও খুচরা বিক্রেতারা এইগুলি পর্যালোচনা ও বিবেচনা করছেন, উৎকৃষ্ট ভিডিওগুলিকে পুরস্কৃত করছেন, উপরন্তু তারা এই চ্যানেলগুলিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া বা এই পরিবারগুলিকে তাদের পণ্যগুলি পর্যালোচনা করার জন্য অর্থ প্রদান করতে শুরু করেছেন। বেঞ্জামিন বারোজ আরও বলেন,এই ইউটিউব চ্যানেলগুলির মাধ্যমে তারা এখন সত্যই কিছুমাত্রায় অরক্ষিত নবীন প্রজন্মের কাছে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারছেন”।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সাথে ২০১৯ গোপনীয়তা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসাবে, ইউটিউব ভিডিওতে শিশুদের উদ্দেশ্য সরাসরি করা বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে। ফলে, অনেক ইউটিউব তারকা হারিয়েছেন তাদের তরুণ ভক্তদের এবং তাদের বিজ্ঞাপনসূত্রে অর্জিত অর্থও হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী নিয়ন্ত্রকরা অনলাইন প্রভাবশালীদের বাধ্য করেছেন, তাদের শিশুদের খেলনা এবং এইজাতীয় দ্রব্যের বিজ্ঞাপন থেকে অর্জিত অর্থের পরিমাণ কিংবা তা বিনা মূল্যে হচ্ছে কী না তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে। এটিই একমাত্র সমস্যা নয়। এই ইউটিউব শিশু তারকাদের, জীবন ও জীবিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ।প্রচলিত আইনের সাহায্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এই শিশুদের নিজস্ব জীবন বা তাদের কাজের সময়সীমাকে সুনিশ্চিত করতে পারছে কিনা। উদারহন স্বরূপ বলা যায়, মেলিসা হান্টার ২০০৮ সালে, তার সন্তান, যখন বয়স তার মাত্র চার, তাকে নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘ফ্যামিলি ডল রিভিউ’। সেই শিশুটি যখন কৈশোরে উপনীত হল, বালক কাইডেন, এই অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বালকটিকে দিয়ে আর এই অনুষ্ঠানটি করানো যেত না।

ফ্যামিলি ভিডিও নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা মেলিসা হান্টার বলেন,“আমার সন্তান ভেবেছিল যে, আমি বোধ হয় রেগে যাব বা হতাশ হব। কিন্তু আমি মনে করি যে, এটি শুধু আমার সন্তানের জন্য প্রযোজ্য নয়, প্রচুর শিশু তারকা যারা ইউটিউব ভিডিওগুলির নির্মাণের সাথে যুক্ত,তাদের কাছে এটাই বাস্তব। প্রথম প্রথম এটি মজাদার কিছু হলেও পরে কিন্তু এটি একটি পারিবারিক ব্যবসায্ পরিণত হয়ে যায়।"

শিশুদের জন্য ইউটিউব এখন সামগ্রিক এক পরিবর্তন আনতে চাইছেন এই ব্যবস্থায়, চ্যালেঞ্জটা এরকম, নতুন শ্রোতা তৈরি করতে হবে, যুক্ত করতে হবে নতুন কলাকুশলীদের, অবিচ্ছিন্ন রাজস্ব প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, এবং প্রস্তুত করতে হবে এক ভিডিও সংরক্ষণাগার।

মেলিসা হান্টার তার পরিবারের প্রস্তুত সব ভিডিও শুধু যে সংরক্ষিত করেছেন তাই নয়, তৈরি করেছেন এক গোপনীয়তার রূপরেখা যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল তাদের সন্তান কাইডেনের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংরক্ষণ। মেলিসা আরও বলেন, “কাইডেনের ষোড়শ জন্মদিনে তাঁর অনুরোধ ছিল যে তার সমস্ত পুরনো ভিডিওগুলি যেন সবাই দেখতে না পায়। মেলিসা বলেন, এতে পারিবারিক রোজগারের আর্থিক ক্ষতির একটা দিক ছিল, তবে আমি সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম না। সবারই নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষার একটা অধিকার রয়েছে”।

"নিজেকে সম্প্রচার করুন" দীর্ঘদিন ধরেই ইউটিউবের এই ধ্বনি বা প্রচারে প্রভাবিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার এমন কার্যক্রম চালিয়েছে, এবং তার ফলে কতিপয় শিশু তারকায় রূপান্তরিত হয়েছে।তবে পর্দার উভয় দিকের শিশুদের কাছে তা ভাল হয়েছে কিনা, এটি একটি প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

XS
SM
MD
LG