আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগেও ঢাকার রাস্তায় নারী মটর বাইকার ছিলনা বললেই চলে। এরই মধ্যে শুধু রাজধানীতেই নারী বাইকরের সংখ্যা প্রায় পাঁচশত। তাদের যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দময় কোন বাহন না থাকায় নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মেয়ের ভাবনাতেই এখন স্কুটি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং কর্মজীবি নারীরাই বাইকের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। ভয়েস অব আমেরিকার সাথে আলাপকালে বাইক চালানোর আগে ও পরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার রুনা চৌধুরী। রুনা বললেন, স্কুটিটিকে সঙ্গী হিসেবে নেয়ার পর থেকে তার জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কাঁচা বাজার করা, বাচ্চার স্কুল, অফিস আদালত, শপিং সবই এখন হাতের নাগালে বলেই মনে হয় তার। তিনি বললেন, ২৪ ঘন্টার দিন এখন অনেক বড় বলে মনে হয়।
এক বছর যাবৎ স্কুটির চালাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক সাকিয়া হক। তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে জানালেন, বাসে করে যখন তিনি কোন গন্তব্যে যেতেন তখন নিজেকে নিরাপদ মনে হতো না। তাই নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার তাগিদেই তিনি স্কুটিটা কিনেছিলেন। এক বছর মটর বাইক চালানোর পর ডক্টর সাকিয়া মনে করেন, মটর বাইক কেনাই তার জীবনের একটি খুব ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। ট্রাফিক জ্যামের শহর ঢাকায় যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হয় সেখানে মটর বাইক নিযে খুব সহজেই গন্তব্যে পৌছানো যায়। বাইক চালাতে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর হক বললেন, প্রথম দিকে প্রতিবেশি সহ পথচারী এবং যাত্রীরা একটু বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালেও এখন নারীদের বাইক চালানো বেশিরভাগ লোকের চোখে সহনীয় হয়ে গেছে।
এমনকি, দুই চাকার এই যান্ত্রিক বাহনটির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে নারীদের একটি সংগঠনও রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মজীবি নারীদের উৎসাহিত করতে অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ঐ সংগঠনটির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডক্টর মানসী সাহা ভয়েস অব আমেরিকাকে জনালেন, এ উদ্যোগকে সম্প্রসারিত করতে দেশের প্রতিটি জেলায় তারা নতুন প্রজন্মের মেয়েদের নিয়ে সমাবেশ করছেন। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এখন কোন বড় সমস্যা নয় বলেও মনে করেন মানসী।
নারী বাইকারদের সংগঠনের সদস্যরা মনে করেন, নারীদের স্বাবলম্বী করা ও তাদের যাতায়াত নিরাপদ করতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। আর তাই তাদের জন্য মটর বাইক সহজলভ্য করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজ শর্তে ঋন দেয়ার আহ্বান জানান এ সংগঠনটির সদস্যরা।