অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পোটোম্যাক থেকে পদ্মা-গঙ্গা: পর্ব ৮


মাইকেল প্ল্যাটো সেই ছোটোকাল হ’তেই দারূন পছন্দ করে দু’টো জিনিষ। প্রথমত: রেভারেন্ড মার্টীন লুথার কিং তার বরাবরের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব – আর দ্বিতীয়ত: কাপকেক তার অসম্ভব রকমের মনপছন্দ খাবার। ছোটোকাল থেকেই শুনে এসেছে, বাড়িতে, কিংয়ের সেই যুগান্তকারী বাণী – আমার একটা স্বপ্ন আছে – আই হ্যাভে এ ড্রিম। বাড়িতে ফ্রেমে আঁটা ঐ কথাটা নিত্যদিনই দেখে দেখে সে বড়ো হয়েছে- কিংয়ের জীবনাদর্শ-সংগ্রাম কেন্দ্র ক’রে স্বপ্ন দেখতে শিখেছে সেও। আয় বৈষম্য আর শিশু কিশোর বয়সীদের ক্ষুধা- খাদ্যের অপ্রতুলতা পিড়া দিয়েছে তাকে সব সময়েই – আর পাশাপাশিই কিভাবে যেন তার অতি প্রিয় খাবার কাপকেকটা জীবন চলার ছন্দে গ্রথিত হয়ে গিয়েছে। ম্যারীল্যান্ডের বাসায়, কম্পিউটারের সামনে বসে কিভাবে জানি ইউ টিউবে ময়দা মেখে- ডিম ভেঙ্গে, তার সঙ্গে পানি মিশিয়ে কাপ কেক বানানোর তরিকাটা সে রপ্ত ক’রে নিয়েছিলো সেই এগারোর বয়:প্রান্তে পৌঁছুনোর আগেই। এবং ঐ বয়সেই প্ল্যাটো একটা বেকারী চালু ক’রে নিয়েছিলো এবং ঐ বেকারীতে শুরু ক’রেছিলো কাপ কেক বিক্রির পাট। কাপ কেকের সঙ্গে নানান ধরনের কুকি-বিস্কুট-টোস্ট তৈরি এবং তা বিক্রিও শুরু ক’রেছিলো সে পড়াশোনার পাশাপাশি- অবশ্যই। ঐ ছোটোকালেই একটা জুতোর দোকানের একটা স্লোগান তাকে আকৃষ্ট ক’রেছিলো খুব- বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি। জুতো এক জোড়া কিনলে এক জোড়া ফ্রি পাবে তার সঙ্গে। প্ল্যাটও শুরু ক’রলো ঐ একটা কাপ কেক বা এক প্যাকেট টোস্ট বা বিস্কুট এক ঠোঙ্গা কিনলে আরেকটা মাগনা পাওয়া যাবে তার সঙ্গে। একই সঙ্গে ঐ একই বিভঙ্গে প্ল্যাট শুরু ক’রেছে এক প্যাকেট কাপকেক বা এক ঠোঙ্গা বিস্কুট বিক্রি হ’লে আরেক প্যাকেট সে দান ক’রে দেয় ক্ষুধার্থ বা গরীবদের জন্যে। ঐ এখানেও মার্টীন লুথার কিংয়ের আমার একটা স্বপ্ন আছে দর্শন কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ ক’রে এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য অনেক দেশেও লিঙ্গ এবং বয়সভেদে মেদ বৃদ্ধি বা বলা যায় মেদ বাহূল্য বড়ো একটা স্বাস্থগত সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং এর অন্যতম প্রধান একটা কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞেরা খাদ্য তালিকায় বেশিরকমে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উপস্থিতিকে দায়ি ক’রছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ ইনস্টিটিউট এন আই এইচ‘এর Cell Metabolism পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে বেশি রকমে প্রক্রিয়াকরণ আঁশ ছাড়ানো খাদ্য সামগ্রীর ভেতরে দৈনিক যেখানে তিন হাজার ক্যালোরির উপস্থিতি দেখা যায় – সে যায়গায় আঁশালো বা স্বল্প আঁশযুক্ত খাবারে পাওয়া গিয়েছে অন্তত: পাঁচ শ’ ক্যালোরি কম। দিনের হিসেবে বলা হ’চ্ছে দু’সপ্তাহ বা চোদ্দ দিনে আঁশযুক্ত খাবার খেয়ে যেখানে দু’পাউন্ডের মতো ওজন কামানো যায় সেখানে একই নিক্তিতে ঐ একই সময়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঐ একই মাপে প্রায় দু’পাউন্ড পরিমান। চিকিৎসকেরা যেমন বলে থাকেন। মানুষ খায় বেঁচে থাকার জন্যে – খাবার জন্যেই বেঁচে থাকে না।

বিয়ে নিয়ে অনেকেই যেমন অনেক হৈচৈ করেন – অনেকে আবার বিয়ের কাজটা চুপচাপই সেরে ফেলেন। বিয়ে মানেই কার্ড ছাপাতে হবে- হল ভাড়া করতে হবে- আত্মিয় বন্ধুদের দাওয়াতের লিস্ট তৈরি করতে হবে। আবার সনাতন তরিকায় অভ্যস্তদের জন্যে তো এ ফিরিস্তি আরো দীর্ঘ হতে পারে। যেমন ঘটক আসবে – কথাবার্তা চ’লবে –দেওয়া থোওয়া নিয়ে কথা হবে, তার পর গায়ে হলুদ- ব্যাচেলার্স পার্টী এবং ওমনি সব নানান অনুষ্ঠানাদির পর আসবে কাজি বা পুরুত ঠাকুর বা পাদ্রী বিয়ে পড়ানোর জন্যে। এসব তো আছেই। যুক্তরাষ্ট্রে ইদানিং ছেলে মেয়ে দু’জনই যখন বিয়ে করবে ব’লে মনস্থ করে ফেলে তখন তারা পছন্দসই একটা যায়গা খু’জে নেয় – যেমন কোনো ঝর্নার পাড়, বা নদীর তীর অথবা কোনো পার্কের কোনা কোনা বা বনাঞ্চলের কোনো শান্ত সমাহিত চোখ জুড়োনো যায়গা বেছে নিয়ে – খুব স্বল্প সংখ্যক জনা কয়েক বন্ধূ – বা আত্মীয়কে নিয়ে নিজেরা নিজেরাই আংটি বদল ক’রে – এসো আমরা বিয়ে করি ব’লে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সাঙ্গ করে নেয়। তবে হ্যাঁ- আইন রক্ষার জন্যে পরে আদালতে গিয়ে রেজিস্ট্রির কাজটা সারতে হয় অবশ্যই। তবে সেটা সঙ্গে সঙ্গেই যে করতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। এবং আনুষ্ঠানিকতাও – সেও ঐ পরে সুবিধে মতো সময়েই করা যেতে পারে। অনেকেরই মত যে – পাদ্রি ডাকা , পুরুত আনা বা কাজি সাহেবের দ্বারস্থ হওয়াতো অন্তত: ডিঙ্গোনো গেলো আর বাদবাকি ঝুটঝামেলার জন্যে তো বাকি জীবনটাই রইলো।

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান পোটোম্যাক থেকে পদ্মা-গঙ্গার আজকের পরিবেশনা এ পর্যন্তই। আবার হাজির হবো আগামী সপ্তাহে – এই একই দিনে। সালাম নমস্কার শুভরাত্রি।

please wait

No media source currently available

0:00 0:05:52 0:00

XS
SM
MD
LG