২০শে জানুয়ারী শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মলে যুক্তরাস্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। আর ওই অনুষ্ঠান বিভিন্ন গনমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন সারা বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ। আমেরিকার এই ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া জেনেছেন ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিকেরা।
রাশিয়া
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এক রুশ আর্মি’র পোষাকের দোকানে ট্রাম্পের ছবিসহ ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ড চালিয়ে রেখেছে এবং আমেরিকানদের জন্যে ওই দোকানে মূল্যছাড় দেয়া হয়। মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন।
অবসরপ্রাপ্ত রুশ নাগরিক লিডিয়া ভরোনোভা বললেন, “আমরা আশা করি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। সিরিয়া বিষয়ে আশা করি তারা একটি ঐক্যমত্যে পৌছাবে এবং সেখানার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে”।
খবরের কাগজের তরূন সম্পাদক সেরগেই বললেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্প বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ঠিকই; তবে আমি আশা করি তিনি আমেরিকানদের বিশ্বাস অর্জন করবেন”।
অভীষেক অনুষ্ঠানে দেয় ভাষণে ট্রাম্প, আমেরিকা প্রথম নীতির কথা উল্লেখ করেন।
“বহু বছর ধরে আমরা আমাদের শিল্পের ক্ষতি করে বিদেশি শিল্প সমৃদ্ধ করেছি; আমাদের সেনাদেরকে বঞ্চিত করে, ক্ষতি করে, আমরা অন্য দেশের সেনা খাতে সহায়তা করেছি; নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষিত করা থেকে বিরত থেকে অণ্য দেশের সীমান্ত পাহারা দিয়েছি”।
মেক্সিকো
মেক্সিকানরা অনেকেই বিচলিত। দেশটির প্রভাবশালি ও জনপ্রিয় ম্যাগাজিন Proceso সাবধান করে দিয়ে বলেছে “যুদ্ধ সমাগত”।
হোজে লুইস লোপেজ আগুইরে মেক্সিকো সিটির প্যান এ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটির একজন মিডিয়া এক্সপার্ট। বললেন ট্রাম্পের টুইটার ব্যাবহার এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিচরনের মধ্যে নদিয়ে মতামত প্রকাশ করার ব্যাপারটি আমেরিকার মধ্যে বিভক্তি বাড়াচ্ছে।
“ট্রাম্প একটি সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করছেন যা তাঁর আক্রমণাত্মক ও বিরোধপূর্ন বক্তব্যকে ধারণ করে এবং আমেরিকান সমাজকে সমবর্তিত করবে”।
দক্ষিন আফ্রিকা
নাইজেরিয়া না্জারসহ দক্ষিন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন নিয়ে আশাবাদী।
নাইজেরিয়ার মাইদুগুরির মুহাম্মাদ আবু মুসা বলেন, “আমেরিকানদের বারাক ওবামা প্রশাসন সম্পর্কে অনেক কিছু লেখার রয়েছে। আামরা তার জন্যে প্রার্থনা করি আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জন্যেও প্রার্থনা করি; তার সরকারের সাফল্য কামনা করি”।
নাইজেরের বিরনিন কোন্নির আলহাজী বেল্লো মুসাও আশাবাদ প্রকাশ করে বললেন, “গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রচারনার পরও আমরা তার জন্যে প্রার্থনা করি তিনি যেনো বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। আমরা আরো আশা করি তিনি তৃতীয় বিশ্বকে তাদের উন্নয়ন প্রয়াসে সহায়তা করবেন”।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অবসরপ্রাপ্ত এ্যাটর্নী আব্দুল হাদী আরেজ বলেন, “তিনি বিশ্বাস করেন ট্রাম্প পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। “গত ৩০ বছর ধরে আফগানিস্তানে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে রাখা হয়েছে”। সম্প্রতি তা আরো শক্তিশালি হয়েছে। কারন আমরা রাশিয়া চীন ইরানকে আফগানিস্তানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা করতে দেখছি।
কাবুলের ছাত্র ইমরান খান বলেন নতুন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের আগমনে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা ভাবছি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা না কমে যায়।
দক্ষিন কোরিয়া
সৌলে ২২ বছর বয়সী দক্ষিন কোরিয়ান কর্মী চই সেওউ বলেন, “আমরা ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্ষ্ট নীতির কথা শুনছি তাঁর প্রচারণার প্রথম থেকেই। তার চরমপন্থী দৃষ্ঠিভঙ্গিতে আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন”। তবে দক্ষিন কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো গভীর ও শক্তিশালি করতে ট্রাম্প কাজ করবেন বলে আশাবাদী তিনি।
উত্তর কোরিয়া
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকাগোয় বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী দেশত্যাগী উত্তর কোরিয়ান বললেন ট্রাম্প দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন আনবেন এবং মানুষের জীবনমানের আরো উন্নয়ন ঘটবে।
তিনি বলেন তিনি পিয়ংইয়ংকে চাপ দেবেন এবং উত্তর কোরিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের জতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকী হয়।
লস এঞ্জেলেস এর অপর একজন দেশত্যাগী উত্তর কোরিয়ান কিম চ্যাং হু বলেন বহু উত্তর কোরিয়ান দেশ ত্যাগ করেছেন। আশা করি তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের আইনী সুযোগ দেয়া হবে”।
অভিষেক অনুষ্ঠানে বহু দেশের বহু জাতীর মানুষ আসেন ২০শে জানুয়ারী।
জর্জিয়ার কম্বোডিয়ান নাগরিক নেম ছেয়ং বলেন সে খুব খুশী এখানে আসতে পেরে। তার দেশে এমন হয় না।
জর্জিয়ার সেন সন নামের এক বৌদ্ধ মংক বলেন তিনি এখানে এসে মনে করছেন তিনি ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছেন।
ইয়েহুদা গ্লিক নামের ইসরাইল থেকে আসা ঈহুদী রাব্বি ও Knesset সাংসদ বলেন আমি এখানে এসে কামনা করছি ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটবে।