জাতিসংঘ শিশু তহবিল বলেছে সংঘাতের কারণে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার দিক দিয়ে ২০১৪ সাল সবচেয়ে বাজে একটি বছর। ইউনিসেফের হিসাবে শশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত দেশসমূহের ২৩ কোটি শিশুর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিশু সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতে লিপ্ত এলাকা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরাক, দক্ষিন সুদান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইউক্রেনে বসবাস করছে। জেনেভা থেকে লিসা স্লেইনের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ২০১৪ সাল বিশ্বের ভয়ানক সংঘাত আক্রান্ত দেশসমূহের লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্যে ভীতি আর হাতাশা ভরা একটি বছর। ইউনিসেফের ক্রাইসিস কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান সারাহ ক্রো বললেন, শিশুদেরকে টর্গেট করেছে যুদ্ধবাজরা। তাদেরকে জোর করে সৈনিক হিসাবে কাজ করানো হয়েছে, যৌনকর্মী হিসাবে বিক্রি করা হয়েছে।
“বিশ্বের জন্য যদি এটিকে রিপোর্ট কার্ড হিসাবে ধরা হয়, তবে নি:সন্দেহে আমরা ফেল করবো। শিশুদের জন্য এটি ছিল বিধ্ধংসী একটি বছর। এ বছর শিশুদের এ্যাতো ক্ষতি হয়েছে যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে হয়নি। ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিশু সরাসরি এবং ২৩কোটি অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সংঘাত যুদ্ধ সহিংসতায় এ্যাতো বেশী শিশু কখনোই ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি”।
ইউনিসেফ বলেছে শিশুদের অতংকের কোনো সীমা পরিসীমা নাই। স্কুলে পাঠগ্রহণকালে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে ঘুমন্ত অবস্থায়। তাদেরকে এতিম বানানো হয়েছে, অপহরণ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে সেনট্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে এবং দক্ষিন সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবন আতংক ও কঠিন বিপদের মধ্যে ফেলেছে।
যুদ্ধের কারণে সেসব দেশে লক্ষ লক্ষ শিশু বাড়ীঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের অনেকেই মারা পড়েছে, অনেকে আহত ও পঙ্গু হয়েছে। অপুষ্টি ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে বহু শিশু।
ইউনিসেফ বলেছে মধ্যপ্রাচ্যর যুদ্ধ শিশু ও নারীদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়েছে। গত সামারে গাজায় ৫০ দিনের যুদ্ধে ৫৩৮জন শিশু মারা গেরছ, গৃহহীন হয়েছে ৫৪ হাজার জন।
ইরাকে নারী ওমেয়েদের ওপর চলে যৌন নিপীড়ন। কৃতদাস হিসাবে বিক্রী করাহয়, পাচার করা হয় তাদেরকে। সিরিয়া যুদ্ধে ৭৩ লক্ষ শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এপ্রিলে ইউক্রেনে রাশিয়ার মদদে শুরু হওয়া সংঘাতে ১ লক্ষশিশু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ শিশু। ক্রো বলেন গিনি লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে ইবোলা মহামারী’র কারণে বহু শিশু এতিম ও গৃহহীন হয়েছে।
“ইবোলা’র কারনে যে পরিমাণ শিশু স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছে, বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাদের ও তাদের পরিবারের জীবনে, তাদের শিক্ষায়, এমন আগে কখনো ঘটেনি”।
নানাবিধ সমস্যা থাকার পরও ইউনিসেফ বলেছে সংঘাতের কারণে লক্ষ লক্ষ শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হলেও হতাশ হলে চলবে না। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা, শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ বিশ্বের সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের সাহায্যে কাজ করে চলছে, তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর লক্ষ নিয়ে।