অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

একজন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ


যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন স্থান। প্রতিবাদ বিক্ষোভ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন স্থান। প্রতিবাদ বিক্ষোভ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া সহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কে প্রতিবাদকারীরা মুখোশ পরে এর প্রতিবাদ করেন। কলোরাডোর ডেনভারে বিক্ষোভ হয়েছে, জর্জিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে।


২৫শে মে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ; গ্রেফতারকৃত, হ্যান্ডকাফ পরানো কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর তার হাটু দিয়ে ৮ মিনিট চেপে রাখার পর তার মৃত্যু ঘটে। সে সময় ফ্লয়েড বলেছিল, আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না। অফিসার ডেরেক চাওভিনকে, পরে থার্ড ডিগ্রি মার্ডারের গ্রেফতার হয়।


জর্জ ফ্লয়েরডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষেভ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক বার্তায় বলেছেন, তিনি শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সমর্থন করেন, তবে তা যদি আইনবহির্ভুত সংঘাতে রূপ নেয় তা গ্রহনযোগ্য হবে না।

আমাদের হোয়াইট হাউজ সংবাদদাকতা প্যাটসী ওয়াইদাকুসাওয়ারা তার প্রতিবেদনে বলেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে মিনেসোটায় শুক্রবার বিক্ষোভ হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প- এই ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন,

“আমি শান্তুপূর্ন প্রতিবাদের সমর্থন করি। তবে মিনিয়েপোলিমের মতো তা যেওনো বেআআ্‌আইনী বিক্ষোভ ও সংঘাতে রুপ না নেঙয়”।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন দরকার হলে এসব থামাতে সেনা নয়োগ করা হবে।


তিনি বলেন, “যখন লুট হবে, তখন শুট হবে”।

১৯৬০ এর দশকে এই বাক্যটি ব্যবহৃত হয় মায়ামী পুলিশ প্রধান কর্তৃক ।

সমালোচকরা ট্রাম্পের এই মন্তব্যের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলছেন, তিনি সংঘাত উস্কে দিচ্ছেন।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেইথ মায়াস বলেন, “তিনি বর্ণবাদকে উস্কে দিচ্ছেন। আমরা এম্নিতেই উত্তপ্ত অবস্থায়। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ অবস্থা চলছে। তিনি তাতে আরো বিস্ফোরক দিচ্ছেন”।

মিনিয়াপোলিসে ঘটনার খবর সংগ্রহের সময় সিএনএন এর রিপোর্টার ওমর জেমেনেজ, ফটো সাংবাদিক লিওনেল মেন্ডেজ ও প্রযোজক বিল কিরকোসকে শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মিনেসোটা গভর্ণর টিম ওয়ালজ সিএনএন সাংবাদিক গ্রেফতারের বিষয়ে এক বিবৃতিতে ক্ষমা চান। বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটর কোনো কারণই থাকতে পারে না”

টুইটার বার্তায় সিএনএন বলেছে, “এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনীর পরিস্কার লংঘন”। বলা হয় পুলিশ সিএনএনের আরো এক শ্বেতাঙ্গ সাংবাদিককে সাবধান করলেও কতাকে গ্রেফতার করেনি।

ঐ প্রতিবাদের সংবাদ সংগ্রহকারী সিএনএনের অপর রিপোর্টার জশ ক্যাম্পবেল বলেন, পুলিশ তার দিকেও তেড়ে এসেছিলো; কিন্তু গ্রেফতার করেনি।

“আমাকে তারা ভিন্নভাবে দেখছিলো”

জিমেনেজ কৃষ্ণাঙ্গ ল্যাটিনো, মেন্ডেজ হিস্প্যানিক এবং কিরকোস ও ক্যাম্পবেল দুজনই শ্বেতাঙ্গ।

মিনেসোটা রাজ্যে পুলিশ টুইটার বার্তায় বলেছে পুলিশ রাস্তা পরিস্কারের সময় অনেককেসহ ঐ চার সাংবাদিককেও গ্রেফতার করে। পরে গনমাধ্যম কর্মী প্রমানিত হবার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মিনেসোটা গননিরাপত্তা বিভাগের গন যোগাযোগ পরিচালক ব্রুস গর্ডন বলেন এ বিষয়ে পুলিশ ও রাজ্য গভর্ণর বক্তব্য দিয়েছেন।

গভর্ণর ওয়ালজ বলেছেন, “এ ধরণের পরিস্থিতিতে যখন গন্ডগোল থামাতে ব্যস্ত পুলিশ, আমাদের এটাও গুরুত্ব দেয়া দরকার যেনো সাংবাদিকরা নিরাপদে কাজ করতে পারে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। তবে এমন ঘটনা ঘটার কোনো কারন নেই”।

কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিক সংস্থা’র সভাপতি ডরোথি টাকার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি অপ্রয়োজনীয় এবং প্রথম সংশোধনীর লংঘন।

দা সেভ জার্নালিজম প্রজেক্টের এক বার্তায় বলা হয়, “জিমেনেজের গ্রেফতার” অগ্রহণযোগ্য।

“কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিক জিমেনেজকে কাজ করার সময় গ্রেফতার করা হয়; কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের খবর সংগ্রহের সময় তাকে গ্রেফতার করে মিনেয়াপোলিস পুলিশ”।

যুক্তরাষ্ট্রে গনমাধ্যমের স্বাধীনতা লংঘনের তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান U.S. Press Freedom Tracker এর মতে, প্রতিবাদ বিক্ষোভের খবর সংগ্রহের সময়, ২০১৭ সাল থেকে ৪০ জনেরও বেশী সাংবাদিক গ্রেফতার ও ১৯ জন সাংবাদিকের যন্ত্রপাতি কেড়ে নেয়া হয়।

কমিটি টু প্রোটোএক্ট জার্নালিস্টস এ নিয়ে আগে ও রিপোর্ট করেছে।

সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

রিপোর্টার্স কমিটি ফর দা ফ্রি প্রেস এর নির্বাহী পরিচালক ব্রুস ব্রাউন বলেন, “প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহের সময় নিষেধ ও বিক্ষোভের সময় সাংবাদিক গ্রেফতারের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়”।

জর্জায়ার প্রতিবাদ নিয়ে আমাদের সহকর্মী তাওহীদুল ইসলাম কথা বলেন সেখানকার এক বাংলাদেশীর সঙ্গে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আমাদের সহকর্মী আবু নাসের রাজীব ঘটনা নিয়ে খবর পাঠান।

কেনতাকীর লুইসভিলে মার্চ মাসে সেখানে পুলিশের গুলীতে নিহত এ ক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর হত্যার বিচার দাবী করেন।

ডেমোক্রেটিক দলেনর প্রার্থী জো বাইডেন ডেলোয়ারে তার বাড়ী থেকে ফ্লয়েড হত্যাকান্ড নিয়ে বলেন, “কেউ আমরা এ থেকে পার পাবো না। কেউ আমরা চুপ থাকতে পারবো না। আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না- এমন কথা শোনার পর কিভাবে চুপ থাকা যায়। কিছুই করার নেই”।

XS
SM
MD
LG