শাগুফতা নাসরিন কুইন
সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি শাগুফতা নাসরিন কুইন শুরু করছি আজকের নারী কন্ঠ।
আজ নারী কন্ঠে দুটি বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করব। তিউনিশিয়ায় নির্বাচনে মহিলাদের ভুমিকা এবং প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক অপেরা তারকা সুকন্ঠি জেসি নর্ম্যানের প্রয়াণ।
২০১১ সালের অভ্যুথ্থানের পর তিউনিশিয়ার রাজনীতিতে মহিলারা ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। তারা আশা করছে ৬ই অক্টোবার যে সংসদীয় নির্বাচন হবে তাতে লিঙ্গ সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে তারা আরও অগ্রগতি সাধন করবে। ভয়েস অফ আমেরিকার লিসা ব্রাইয়েন্ট, তিউনিস থেকে পাঠানো রিপোর্টে জানিয়েছেন কিন্তু আগে যা অর্জন করা গেছে তা টিকিয়ে রাখাটা হয়ত সমস্যা হতে পারে।
এই নির্বাচনের প্রাক্কালে সামিরা শাউয়াশি কে এড়ানো সহজ নয়। Heart of Tunisia দলের মুখপাত্রী হিসেবে তাকে বার্তা মাধ্যমে সারাক্ষনই দেখা যায়। Heart of Tunisia’র প্রধান হচ্ছেন কারারুদ্ধ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নাবিল কারোউই।
কিন্তু রবিবারের সংসদীয় নির্বাচনে শাউয়াশি নিজে একজন প্রার্থী। তিনি তিউনিস এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে।
সংসদীয় নির্বাচনের প্রার্থী সামিরা শাউয়াশি বলেন, “বিপ্লবের আগে মহিলাদের জন্য রাজনৈতিক কোটা ছিল। কিন্তু অনেক সময় দেখা গেছ তারা সেই পদের জন্য উপযুক্ত নন। এখন মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে দক্ষতার উপর। এখন নেতা হওয়ার জন্য আপনাকে দলের মধ্যেই লড়তে হবে।”
তিউনিশিয়ায় Women & Leadership Associationএর প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সানা ঘেনিমা। তিনি বললেন, “মহিলা প্রার্থী পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন নয়। কিন্তু লড়াইটা হচ্ছে দলগুলোকে রাজী করানো যাতে তারা তালিকার শীর্ষে মহিলা প্রার্থীদের নাম দেয়।”
তিউনিশিয়ায় মহিলারা দীর্ঘ দিন ধরে অনেক ধরনের অধিকার ভোগ করছেন যা আরব বিশ্বের অন্যান্য স্থানে দেখা যায় না।
গত বছরের পৌর নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক আসন জয় করে মহিলারা। তিউনিশিয়ার বর্তমানের সংসদে মহিলা সাংসদদের সংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশ। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে মাত্র এক পঞ্চমাংশ হচ্ছেন মহিলা।
একটি বড় কারণ হচ্ছে সে দেশে আইন আছে, যে, দলগুলোর তালিকায় লিঙ্গ সমতা থাকতে হবে। এ বছর দুই মহিলা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিসে এই প্রথম এক মহিলা মেয়র হয়েছেন। তিনি মধ্যপন্থী ইসলামপন্থী ইন্নাদহা দলের প্রার্থী ছিলেন।
কিন্তু আইন পরিষদের নির্বাচনে ইন্নাদহা’র তালিকাগুলোর শীর্ষে মহিলারা আছেন ১০ শতাংশেরও কম। দলের তালিকায় কারা অগ্রাধিকার পাবে সে ক্ষেত্রে কোন লিঙ্গ সমতা দেখা যাচ্ছে না। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভাল প্রার্থী পাওয়া কঠিন।
ইন্নাদহা দলের শীর্ষ সদস্য হচ্ছেন খালিল আমিরী। তিনি বলেন, "১০ শতাংশ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা আরও ভাল করতে চাই এবং আশা করছি ভবিষ্যৎএ আমরা আরও ভাল করবো।”
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মহিলারা যাতে ভোট দেন তাদেরকে রাজী করানো। বহু মহিলা খুবই হতাশ হয়েছেন বিপ্লব উত্তর রাজনীতিতে।
তিউনিশিয়ায় Women & Leadership Associationএর প্রেসিডেন্ট সানা ঘেনিমা বললেন, “জনগন আশা ছেড়ে দিচ্ছে। তারা রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে না। তারা আরেকবার নেতিবাচক অভিজ্ঞতা চায় না।”
কিন্তু শাউয়াচি মনে করেন এখন আর পিছপা হওয়া যাবে না। তিউনিশিয়ার জনগন এখন নির্বাচনে মহিলা প্রতিনিধি বেছে নিতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন। তবে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে একজন মহিলাকে বেছে নিতে তারা প্রস্তুত কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
**************************************
প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক অপেরা তারকা সুকন্ঠি জেসি নর্ম্যান যিনি চারটি গ্র্যামি পুরস্কার, National Medal of Arts এবং Kennedy Center সম্মান পেয়েছেন তিনি এ সপ্তাহে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । তাঁর বয়স হয়েছিলো চুয়াত্তর। ভয়েস অফ আমেরিকার জেফ কাস্টার বিস্তারিত জানিয়েছেন।
জেসি নর্ম্যান এর পরিবারের মুখপাত্রের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয় নর্ম্যান সোমবার খুব ভোরে নিউ ইয়র্কে মারা যান। ২০১৫ সালে তিনি মেরুদন্ডে আঘাতে অসুস্থ হন এবং সেই অসুস্থতার কারণেই তিনি মারা যান।
নর্ম্যান এক অসাধারণ উজ্জল তারকা ছিলেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। সারা বিশ্বে এবং অপেরা জগতে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন।
জেসি নর্ম্যান ল্যা স্কালা এবং Metropolitan Operaর মত প্রতিষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
১৯৯৭ সালে নর্ম্যান, Kennedy Center Honor অর্জন করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল বাহান্ন। সে সময় Kennedy Center এর ২০ বছরের ইতিহাসে তিনিই সব চাইতে কম বয়সে ওই সম্মান পান। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে National Medal of Arts পুরস্কারে ভূষিত করেন।
জেসি নর্ম্যান যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের অগাস্টাতে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তখন বর্ণ পৃকীকরণের সময় ছিল। তিনি গীর্জায় গান গাইতেন। বড় হয়েছেন সঙ্গীত প্রিয় এক পরিবারে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা গান গাইতেন পিয়ানো বাজাতেন।
তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে Howard Universityতে সঙ্গীত বিষয়ে পড়াশুনার জন্য সক্লারশিপ পান। জেসি নর্ম্যান পরে Peabody Conservatory এবং University of Michiganএ পড়াশুনা করেন।
তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক মহলে অপেরায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ১৯৬৯ সালে বার্লিনে। তিনি মিলান, লন্ডন সহ নিউ ইয়র্কে সঙ্গীত পিপাসুদের তাঁর অপূর্ব কন্ঠস্বর দিয়ে বিমোহিত করেন। The New York Timesপত্রিকায় তাঁর কন্ঠকে "a grand mansion of sound." বলে আখ্যায়িত করা হয়।
তিনি ১৫ বার Grammyর জন্য মনোনীত হন। ১৯৮৫ সালে তিনি Ravel: Songs of Maurice Ravel এর জন্য পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে জেসি নর্ম্যান Grammy Lifetime Achievement Award পান।