তিন দিন ব্যাপী সন্ধির মেয়াদ আরও বাড়ানোর বিষয়ে কায়েরোতে অনুষ্ঠিত আলোচনা ভেঙ্গে পড়লে , আজ শুক্রবার হামাসের রকেট আক্রমণের জবাবে ইসরাইল আবার ও গাজায় উপর্যুপরি বোমা বর্ষন করে। গাজায় এই বোমা আক্রমণের নতুন শিকার হয়েছে দশ বছরের একটি বালক। লক্ষ্য করার বিষয় যে বার বার শিশুরা পরিণত হচ্ছে এই লড়াইয়ের নিমর্ম শিকার। একই পরিবারের একাধিক শিশুর নিহত কিংবা পঙ্গু হবার সংবাদ বিব্রত করেছে বিশ্ব বিবেককে । তবে ইসরাইলের তরফ থেকে এ রকম অভিযোগ ও রয়েছে যে গাজায় উগ্রপন্থিরা শিশুদের মানবঢাল হিসেবে কোথাও কোথাও ব্যবহার করেছে। অভিযোগ আছে যে সুড়ঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে।
গাজার ১৮ লক্ষ অধিবাসীর অর্ধেকের বয়স ১৮ বছরের নিচে। জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল বলছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গত এক মাস ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সেই শিশু এবং তাদের পরিবারের ওপর।
এবারের সংঘর্ষে যে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক ফিলিস্তিনী মারা গেছে, তার প্রায় ১ তৃতীয়াংশ শিশু। অর্থাৎ মারা গেছে ৪শ’র বেশি ফিলিস্তিনী শিশু। আহত শিশুর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের গাজা কার্যালয়ের প্রধান পারনাইল আইরনসাইড বলছেন, যে শিশুদের বয়স ৭-এর ওপর তারা এরই মধ্যে ২০০৮ ও ২০১২ সালের যুদ্ধ দেখেছে।
এবারের সংঘর্ষে গাজার জীবন এবং অবকাঠামোর ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা আগের তুলনায় মারাত্মক।
তিনি বলছিলেন, গাজা ভূখন্ডে এমন কোন পরিবার নেই, যে পরিবার কোন না কোনভাবে এই যুদ্ধে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। হয়তো যুদ্ধে কাউকে হারিয়েছে, আহত হয়েছে, বা তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই যুদ্ধে গাজার প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
মিজ আইরনসাইড আরো বলেছেন, গাজার শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। তারা সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন থাকে, আতঙ্কে রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলছে এবং দুঃস্বপ্ন দেখছে। তারা এমনকি তাদের অভিভাবকদের ওপরও সাহায্যের জন্যে নির্ভর করতে পারছে না কারণ তাদের অবস্থাও সঙ্গীণ। প্রায় ৪ লক্ষ শিশুর জরুরি ভিত্তিতে মানসিক সাহায্য প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক রাষ্ট্রদূত, নাভি পিল্লাই গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের সমালোচনা করেছেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, হামাসেরও দোষ আছে। নিরাপত্তা নিয়ে ইসরাইলের শঙ্কা এবং তাদের নাগরিকদের রক্ষার যে তাগিদ তা তিনি বুঝতে পারেন।
তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের রকেট হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারণ এরই প্রতিক্রিয়ায় বেসামরিক নাগরিকরা ঢালাওভাবে তার শিকার হচ্ছে। শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে তিনি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলছেন, গাজার শিশুদের যেমন একটি সুন্দর জীবন পাবার অধিকার রয়েছে, তেমনই অধিকার রয়েছে ইসরাইলের শিশুদের।
গাজার বিদ্যুত কেন্দ্রে ইসরাইলের বোমা হা্মলার ফলে, ঐ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ নেই, ব্যবস্থা নেই পরিস্কার পানি পাম্প করার। মিজ আইরনসাইড বলছেন, এর অর্থ হলো পয়নিষ্কাশনের পানিও সীমিত। যে শিশুরা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে, তারা ত্বকের রোগ, স্কেইবিস, উকুনসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের শিকার হচ্ছে।
তিনি বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরের মানুষদের দুর্ভোগ এর চাইতেও বেশি।
তিনি বলছিলেন, তারা শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে আছে। সেখানে, বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পয়নিষ্কাশন প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা দূষিত হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে, যা অনেক শিশু বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুর মৃত্যুর কারণ হবে।
আইরনসাইড আরো বলেছেন, ইসরাইলী বিমান হামলায় গাজার স্কুলগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের ৮৯টি স্কুলসহ অন্তত ১শ ৪২টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য তিনি মনে করেন হামাসও এর জন্যে দায়ী। কারণ তা নিষিদ্ধ হলেও তারা জাতিসংঘের তিনটি স্কুলে রকেট মজুদ করেছিল।