অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

খেলার মাঠে আহত হওয়ার নাটক বা ভান করে কি ম্যাচ জেতা যায়?


বিশ্বকাপ ফুটবল যারা দেখছেন তারা খেলার মাঠে মাথা দিয়ে আঘাত করা, ধাক্কা মারা, কনুইয়ের আঘাত এবং এমনকি কামড় দেয়ার ঘটনার সঙ্গে ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়েছেন। আর এসবের শিকার যেসব খেলোয়াড়, তারা অনেক সময় নাটকীয় ভাব দেখান, কখনো কখনো যা হয়ে যায় অতিরঞ্জিত। এ্যাডাম ফিলিপস এসব নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট করেন।

নিউইয়র্কের ব্রুকলীনের একটি বারে ব্রাজিলিয়ান দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। তারা বিশ্বকাপ ফুটবলের ব্রাজিলের খেলা দেখছে। শুধু গোলের সময় নয়, কোনো খেলোয়াড় আঘাত পেলে, দ্রুতগতিতে দৌড়ালে অথবা কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলে এবং মাঠে পড়ে গেলে ক্রমাগতই চিৎকার করে চলছে সবাই।

ফাউল করলে রেফারী বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে হয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন অথবা লাল কার্ড দেখিয়ে তার খেলা বন্ধ করার শাস্তি দেন। আর যার বিরুদ্ধে ফাউল, সেই দলের পক্ষে ফ্রি কিক দেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আহত হওয়া’র নাটক করা বা আঘাতপ্রাপ্ত খেলোয়াড়ের অতিরঞ্জিত আচরণ, তা কি দলকে জয়ী করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়? নর্থ ক্যারোলাইনার ওয়েক ফরেষ্ট ব্যাপ্টিষ্ট মেডিকেল সেন্টারের ক্রীড়া চিকিৎসক ডা. ড্যারিল রোজেনবাম এই প্রশ্নের জবাবে বললেন:

“আমরা প্রচুর পরিমাণে সকার বা ফুটবল খেলা দেখি, এবং কোনো খেলোয়াড় আহত হওয়ার অবস্থা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি; বিশেষ করে সে যখন শরীরের একটি অংশ ধরে মাঠে পড়ে যায়। আমাদের কাছে তাদের কোনো মেডিকেল রেকর্ড না থাকলেও আমরা বোঝার চেষ্টা করি, সে আসলেই আহত হয়েছে কিনা। আমরা দেখেছি যে পুরুষ আন্তর্জাতিক ফুটবলের এক খেলায় একজন ১১ বার আহত হয়েছে এবং তার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ ছিল সত্যিকারভাবে আহত হওয়া। এবং আমরা দেখলাম ঐসব দল যারা আহত হওয়ার ভান করেছিল তারা জিততে পারেনি”।

তবে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই ষ্কুল অব মেডিসিনের ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানী হ্যারিস ষ্ট্র্যাটিনার মতে আহত হওয়ার ভান করার বিষয়টি অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ন খেলায় কাজেও লেগে য়ায়।

“এটা বলা যাবে না যে আপনি ফুটবল খেলতে গিয়ে আহত হবেন না। তবে আমার মনে হয় এটি অনেক ইউরেপীয়ন খেলোয়াড়ের একটা কৌশল যা তাদেরকে শেখানো হয়, সময় আর অবস্থার সদ্ব্যাবহার করে দলের উপকারের জন্য। এটি অনেকটা মুষ্টিযোদ্ধার ন্যায় যিনি কিছুক্ষনের জন্য শ্বাস নিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে আলিঙ্গন করেন অথবা রিংএ পড়ে বিশ্রাম নেন কাউন্টডাউন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত”।

ষ্ট্র্যাটিনার আরো বললেন খেলোয়াড়রা সুবিধা পেতে হরহামেশাই নাটকীয় আচরণ করেন।

“মনোস্তাত্বিক বিবেচনায়, খুব বেশী চঞ্চল খেলোয়াড় সহজে রেফারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তাতে একটা বড় সম্ভাবনা থাকে পেনাল্টীর সুযোগ পাওয়ার”।

ষ্ট্র্যাটিনারের বক্তব্য অনুসারে ইউরোপীয়ন, মধ্য বা দক্ষিন আমেরিকান খেলোয়াড়দের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা তাদের আহত হবার বিষয়টি অতো শক্তভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। তিনি বলেন আমেরিকার ক্রীড়া সংস্কৃতি হচ্ছে আন্তরিকতার সঙ্গে খেলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা; আর সেটিও আমেরিকান দলের জন্য হতে পারে সুবিধাজনক।

প্রথমত আহত অবস্থায় খেললে সেই ক্ষত আরো খারাপ হতে পারে। দ্বিতীয়ত কারো আহত হওয়া কোনো বড় বিষয় হিসাবে না দেখলে অপর দলের জন্য পেনাল্টির সম্ভাবনা কমে যায়। তবুও ষ্ট্র্যাটিনার স্বীকার করেন যে আমেরিকান সমাজে এমনও সংস্কৃতি আছে যেখানে নাটকীয়তাকে উৎসাহ দেয়া হয়।

“আমি আমার সংস্কৃতিকে ধরে রাখোবো। আমি ইহুদী এবং আমার মা ইটালীয়ান বংশোদ্ভুত এবং আমি বলি যে এর মধ্যে বহু নাটকীয়তা রয়েছে। এবং তা খারাপ লাগে না। সমালোচনা করছি না। এইভাবেই মানুষ বেড়ে ওঠে। সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে দলগুলো তো তা ব্যাবহার করবে; কারন ওভাবেই তারা প্রশিক্ষিত”।

প্রশিক্ষন বিষয়ে প্রশ্ন, কৌশল এবং প্রদর্শনী নিয়ে ভক্তদের মধ্যে সমালোচনা তর্ক বিতর্ক চলছেই; কিন্তু বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি মাঝে মধ্যে পাশ কাটিয়ে যেতে চান। ড. ড্যারিল রোজেনবাম বলেন তিনি নাটকীয়তাকে স্বাগত জানাতে চান; কারণ তিনি খেলা পছন্দ করেন এবং তার মতে নাটকীয়তা এই খেলারই অংশ।

XS
SM
MD
LG