আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

ঢাকার বিদেশ মন্ত্রণালয় সোমবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।বাংলাদেশ মনে করে, এই ঘটনাবলী শুধু এই অঞ্চলেই নয়, এর বাইরেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বাস  করে যে, আফগানিস্তানের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক ও বহুদলীয় ব্যবস্থা দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি।

আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ খুব সতর্ক। চটজলদি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছে না। যদিও ঢাকার বিদেশ মন্ত্রণালয় সোমবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।

বাংলাদেশ মনে করে, এই ঘটনাবলী শুধু এই অঞ্চলেই নয়, এর বাইরেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, আফগানিস্তানের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক ও বহুদলীয় ব্যবস্থা দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি।

বিবৃতিতে আফগানিস্তানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি সার্কের সদস্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অন্য এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আফগান পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। এ কারণে পরবর্তী সরকারের বাস্তব অবস্থা দেখে বাংলাদেশ মন্তব্য করতে চায়। সে পর্যন্ত নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ওদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি এখনও ঘোলাটে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, গত ২০ বছর আমেরিকার সমর্থনে আফগানিস্তানে যে সরকার ছিল তারা সুশাসন দিতে পারেনি। তারা চরম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। তাছাড়া ওইসব লোকদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল যাদের বিরুদ্ধে তালিবানরা বিদ্রোহ করেছিল।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

সাবেক এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, তিন লাখ ইউনিফর্মধারী লোক তাসের ঘরের মতো পড়ে গেল মাত্র দশদিনে। তাদের কাছে ছিল আধুনিক অস্ত্র। কিন্তু তারা এমনভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল শেষ পর্যন্ত অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, তারা হঠাৎ করে ভুঁইফোঁড় হিসেবে মাটির ভেতর থেকে বের হয়ে আসেনি। তারা গত ২০ বছরে শক্তি সঞ্চয় করেছে। এতে আমি খুব আশ্চর্য হইনি। শুধু আশ্চর্য হয়েছি, তারা এত তাড়াতাড়ি বিনাযুদ্ধে কাবুল কীভাবে জয় করে ফেলল। নতুন তালিবান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের নীতির বিষয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের একটা ব্যাক চ্যানেলে যোগাযোগ রাখা উচিত। কারণ সেটা যদি না হয় তাহলে আমাদের এখানে অন্যরা উৎসাহিত হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেলে (অব.) এএনএম মূনীরুজ্জামান অতীতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পটভূমির ব্যাখ্যা করেছেন।

মেজর জেনারেলে (অব.)এএনএম মূনীরুজ্জামান

তার মতে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জন্ম হয় আফগান জিহাদফেরত যোদ্ধাদের মাধ্যমে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই আফগান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। নিয়েছেন সামরিক প্রশিক্ষণ। এদের কেউ কেউ বাংলাদেশে তালিবান শাসন কায়েমের স্বপ্নও দেখেন। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষমতা দখল এই গোষ্ঠীকে আবার নতুন করে উজ্জীবিত করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, এটা একটি প্রতীকী ব্যাপার।

আমেনা মহসিন- অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নাইন-ইলেভেন এর ঘটনার পর সেই সেপ্টেম্বরের আগেভাগেই তালিবানরা আবার ক্ষমতা দখল করেছে। এতে প্রতীয়মান হয়, পশ্চিমা শক্তিরা যখন এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত করে, একই সিস্টেম সবার জন্য যে প্রযোজ্য না সেটা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা যেভাবে তাড়াহুড়া করে দেশটা ছেড়ে গেল এতে নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। অনেকেই দেশে ছেড়ে চলে যেতে চাইবে। নারীদের ব্যাপারটা একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।প্রত্যেকটি দেশকে এখন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সেখানে আবার জঙ্গিবাদের উত্থান হয় কিনা!

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনির বলেছেন, আমাদেরকে ভাবতে হবে, নতুন আফগানিস্তানে যে ক্ষমতার সমীকরণ হতে যাচ্ছে সেখানে আমাদের ভূমিকা কী হবে।

শাফকাত মুনির - নিরাপত্তা বিশ্লেষক

আমরা নতুন আফগানিস্তান সরকারকে স্বীকৃতি দেব কিনা? তার পাশাপাশি আমাদেরকে দেখতে হবে যে, আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের যে চমকপ্রদ পরিবর্তন এর কী প্রভাব পড়তে পারে? তিনি বলেন, তালিবানদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসাজশ আছে কিনা তার উপরও নজর রাখতে হবে।