অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"জ্বর হলে যেরকম বলতে পারি যে জ্বর এসেছে, বিষন্নতার দিনেও যেন বলতে পারি বিষন্ন লাগছে"


বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা।
বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা।

বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় অনলাইন ও সরাসরি দুইভাবেই বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলিং সেবা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে ‘মনের বন্ধু’।২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের ৭৫টি পোশাক তৈরির কারখানার ৪০ হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিককে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’। 'ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩’-এর 'সাসটেইনেবিলিটি থট লিডারস' শ্রেণিতে ১০০ উদ্ভাবকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি। এই তালিকায় তাকে ‘সাসটেইনেবিলিটি থট লিডার’ হিসাবে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’। ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ভয়েস অফ আমেরিকা কথা বলেছে তার সঙ্গে।

ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আফরিন শাহনাজ।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনার প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’ থেকে স্বল্প খরচে পোশাক শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩’-এর সাসটেইনেবিলিটি থট লিডারস শ্রেণিতে ১০০ উদ্ভাবকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শ্র্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কী কী উদ্যোগ আপনারা নিয়েছেন? বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কী ধরণের কাজ করে যাচ্ছেন এবং এ সংক্রান্ত ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

তৌহিদা শিরোপা: বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি ২০১৯ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজারের বেশি পোশাকশ্রমিককে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি এবং আমরা অনেক গ্রুপ সেশন করিয়েছি, ট্রেনিং দিয়েছি, মেডিটেশন-এর কাজ করেছি, ইয়োগা সেশন করেছি এবং একটি ফ্যাক্টরিতে আমাদের রিক্রিয়েশন সেন্টারও আছে যেখানে ওয়ার্কাররা তাদের মতো সময় কাটাতে পারে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে, তাদের ওয়েল বিং-এর জায়গাটায় কাজ করতে পারে। এ বছর যখন আমরা টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড জিতলাম টমি হিলফিগার ফাউন্ডেশন থেকে, তখন আমরা সেখানে একটি টপ-আপ কার্ড ডিজাইন করেছিলাম। এই টপ-আপ কার্ড হচ্ছে যে কার্ডের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকরা ২৯ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে নানা ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, ওয়েল বিং সেবা এমনকি বিউটিফিকেশন; সেখানে ভ্রু প্লাক করা, হেয়ারকাট করা যেগুলো তাকে মানুষ হিসেবে অনেক বেশি সেল্ফ স্টিম (self esteem) করবে নিজেকে ভালো রাখতে, সেল্ফ কেয়ার করতে উৎসাহিত করবে, সেই জায়গাটা আমরা আসলে নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি এখনো। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক খাত এমন একটা খাত যেখানে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বড় দাগের কন্ট্রিবিউশন আছে। সে কন্ট্রিবিউশনের জায়গা থেকে তারা যাতে আরো বেশি মাইন্ডফুলি ভালোভাবে থাকতে পারে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাটা যাতে নিশ্চিত হয়, যাতে তাদের সুন্দর সুস্থ জীবন হয় সে কারণে আমরা সেই জায়গাটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এখনো। ভবিষ্যতেও আমাদের আরো নানা রকম, নানামুখী, আরো বিভিন্ন সেন্টার করা এবং সে সেন্টারগুলোতে আরো বেশি উন্নত সেবা দেয়ার কথা নিয়ে আমরা ভাবছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ‘মনের বন্ধু’র শুরুটা কবে কীভাবে হয়েছিলো? কেনো সংবাদপত্রের চাকরী ছেড়ে দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে এ ধরণের একটা উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিলেন?

তৌহিদা শিরোপা: ২০১৫ সালে আমার মায়ের আসলে প্রথমে অ্যাকিউট ডিপ্রেশন হয়। মা কিন্তু সিঙ্গেল প্যারেন্ট। আমার ভাই এবং আমি, অ্যাজ এ কেয়ার গিভার আমাদেরও আসলে অনেক রকমের স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে সে কারণে যেতে হয়েছে। আমরা আমার মাকে যখন ১৪ মাস পরে এই মানসিক ডিপ্রেশনের জায়গা থেকে বের করে নিয়ে আসি, আবার একটা আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে আসি, তখন আসলে আমার একটা উপলব্ধি হয়েছিল, জীবনে আসলে আমাদের এত স্ট্রাগল থাকে যে সে স্ট্রাগলের কথাগুলো আমরা বাইরে বলতে পারি না। আমাদের সব সময় মানুষকে দেখাতে হয় যে আমরা ভালো আছি কিন্তু আমরা আসলে সব সময় তো ভালো থাকি না। এবং এটা স্বাভাবিক যে আমি সব দিন আসলে ভালো থাকবো না। কিন্তু আমি যখন এমন একটা জায়গায় যাবো যেখানে আমি খুব সহজে বলতে পারব যে আমি আজকে ভালো নাই। যাতে আমাকে কেউ জাজ না করে, আমাকে তারা অনেক বেশি ফিল করতে পারে এবং সঠিক কোনো একটা সেবা আমাকে দিতে পারে, সেই প্রফেশনাল জায়গাটা তৈরি করার ভাবনা থেকে আসলে ‘মনের বন্ধু’ করা। ‘মনের বন্ধু’-র রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম ২০১৬ সালে কিন্তু আমরা খুব ভালোভাবে কাজ শুরু করি ২০১৮ সালে এবং সে কারণেই ২০১৯ সালে আমি আমার চাকরি ছেড়ে দেই।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ‘মনের বন্ধু’র কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের বলুন। 'মনের বন্ধু'র কাজগুলো কি এখনো অনলাইন ভিত্তিক? কী কী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মনের বন্ধু প্রদান করছে এবং কারা এই সেবাগুলো নিতে পারছেন?

তৌহিদা শিরোপা: ‘মনের বন্ধু’র সেবাটা হাইব্রিড। ঢাকার লালমাটিয়াতে আমাদের ‘মনের বন্ধু’ সেন্টারে সপ্তাহে শুক্রবার বাদ দিয়ে সব দিনই আমাদের দিনরাত সেবা প্রদান চলে। আমাদের একটি হেল্প লাইন নাম্বার আছে। আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে লোকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের অনেক বাংলায় কন্টেন্ট আছে ফেসবুকে, যেগুলো মানুষ প্রতিদিন দেখেন, মানুষ তাদের মনের জায়গাটা যাতে ভালো রাখতে পারেন, সুন্দর রাখতে পারেন, অনেক হেলদি প্র্যাকটিস করতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের হেল্প লাইন নাম্বারে তারা যোগাযোগ করতে পারেন। হেল্প লাইনে আমাদের কাউন্সিলররা ইনিশিয়াল স্বাস্থ্যসেবা ফ্রি দেন এবং তারপরও যদি মনে করেন যে সেই ব্যক্তির আরো সেশন লাগবে তখন তারা আমাদের যে প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ কাউন্সিলররা আছেন, মনোবিদরা আছে তাদের সাথে সেশন বুক করে দেয়। এখানে আমাদের একটি মোবাইল অ্যাপ আছে সেখান থেকেও তারা আমাদের কাছ থেকে অনলাইনে সেবা নিতে পারবেন। একই সাথে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবেন। আমরা শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক কিন্তু কাজ করি না। যেরকম আমাদের কাজটা পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঠিক সেরকম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রচুর স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের কাজ চলছে এই মুহূর্তে। একইসঙ্গে ক্লাইমেট ভালনারেবল পিপল অর্থাৎ দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোতে যারা থাকেন তাদেরও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ‘মনের বন্ধু’ কাজ করে যাচ্ছে। ‘মনের বন্ধু’র বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কিন্তু যারা ঢাকার বাইরে থেকে ‘মনের বন্ধু’র সেবা নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ‘মনের বন্ধু’ প্রায় পঁচাশি হাজারের মত মানুষকে সরাসরি ইন্ডিভিজুয়াল কাউন্সিলিং দিয়েছে। আর যেটার বড় সংখ্যক এসেছে ঢাকার বাইরে থেকে। তাদের অনেককে আমরা বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে, বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে সারা বিশ্বে কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে আর আমরা সকলেই জানি যে আত্মহত্যা করার মূল কারণ হলো মানসিক সমস্যা। বাংলাদেশেও কিন্তু এই আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তারমধ্যে তরুণ ও কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা বেশি বলে আমরা বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে জানতে পারি। আত্মহত্যা রোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে এবং মনের বন্ধু থেকে আপনারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন কি?

তৌহিদা শিরোপা: আপনি একদম সঠিক পরিসংখ্যান বলেছেন। একই সাথে এটাও সত্যি আত্মহত্যা একটি মানসিক রোগ ডব্লিউএইচও-এর মতে। আত্মহত্যা একটা মেন্টাল হেলথ ইলনেস এবং এটাকে প্রিভেন্ট করা সম্ভব। সেই জায়গা থেকে অবশ্যই কালেক্টিভ এ্যাপ্রোচ মানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। ‘মনের বন্ধু’ অবশ্যই এখানে কাজ করছে। ডব্লিউএইচও-ও কাজ করছে, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কাজ করছে। আরো হয়তো অন্য সংস্থাগুলো তাদের মতো কাজ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাজ হচ্ছে। ‘মনের বন্ধু’ যেটা করছে, আত্মহত্যা প্রতিরোধেও আমাদের একটা ক্যাম্পেইন আছে যেটা আমরা সারা বছর ধরে করি। গত বছর থেকে এটা আমরা শুরু করেছি। এর নাম হচ্ছে ‘মনের দরজায় আমরা’। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিভিন্ন কমিউনিটিতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলছি। আত্মহত্যা প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছি এবং একই সঙ্গে আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণদের মবিলাইজ করছি যাতে তারা কী করে আসলে একটিভ লিসনার হতে পারে। তারা কী করে আসলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জায়গাটায় প্রাইমারি সাপোর্ট, ইনিশিয়াল সাপোর্ট তাদের সহপাঠীদের, তাদের বন্ধুদের, তাদের কমিউনিটি লোকজনকে দিতে পারে এটা নিয়ে 'মনের বন্ধু' কাজ করছে। কিন্তু আমরা মনে করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই কাজটাকে আরো তরান্বিত করবে। আমাদের তরুণদের আরো অনেক সেবা দরকার এবং তাদের অনেক সাপোর্ট লাগবে। সেই সাপোর্টগুলো সবাই মিলে দিলে অনেক বেশি সহজ হবে, অনেক বেশি দ্রুত হবে এবং খুব এফেক্টিভ হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কোন কোন দিক নিয়ে বেশি কাজ করা প্রয়োজন? মানসিক সমস্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়স এবং শ্রেণির মানুষের মধ্যে কী ধরণের সচেতনতা তৈরি প্রয়োজন বলে মনে করেন?

তৌহিদা শিরোপা: আমরা জানি, এখন বাংলাদেশে তিন কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং আমরা দেখেছি করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আমরা অনেক নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছি। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করছি যে আমাদের আসলে যে কাজটা করা উচিত, সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাসিক স্বাস্থ্য সেবা নেয়া ‘লাক্সারি’ সেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কারণ এটা আসলে সবার জন্য প্রযোজ্য। এটাকে আরো আমাদের সহজ করতে হবে। এই সেবাটাকে সুলভ করে দেয়া, সহজ করে দেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। কিন্তু সুলভ করতে গিয়ে আমরা কোয়ালিটিটা যেন মিস না করে ফেলি, যাতে মানুষ কোয়ালিটি সম্পন্ন অথেন্টিক স্বাস্থ্য সেবা পায় সেই জায়গাটা আসলে নিশ্চিত করা এবং এটাকে আরো বেশি আসলে সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। এ কথাটা বলতে যাতে আমার দ্বিধা না হয়। আমার জ্বর হলে যেরকম আমি বলতে পারি যে আমার জ্বর এসেছে, আমার মন খারাপের দিনে, বিষন্নতার দিনেও আমি যেন বলতে পারি যে আমার আসলে বিষন্ন লাগছে এবং সেই জায়গাটাতেই ‘মনের বন্ধু’ কাজ করতে চায়। যাতে সবার আগে‘মনের বন্ধু’র কথা মনে হবে তার ভালো দিনগুলোতে অনেক বেশি ভালো থাকার জন্য এবং খারাপ দিনগুলোতে নিজেকে ভালো রাখার জন্য। ‘মনের বন্ধু’ সেই জায়গাটা আসলে যেতে চায় এবং এই লক্ষ্যে আসলে আমরা কাজ করে চলছি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা পেয়েছেন?

তৌহিদা শিরোপা: সবার আগে যে প্রতিবন্ধকতা আমাদের এসেছে সেটা হলো আমাদের সচেতনতার অভাব। সচেতনতার অভাবেই আসলে আমাদের এই প্রতিবন্ধকতা এসেছে এবং আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের বাজেটের একটা খুব অল্প শতাংশ, ২% এরও কম যায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার খাতে। আমি মনে করি যে সেই জায়গাটাও আরো একটু বাড়ানো উচিত যাতে মানুষ এটা নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে পারেন। সবাই যাতে কাজ করতে উৎসাহিত হতে পারেন। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকাটাও খুবই কঠিন। সেই জায়গাটায় অবশ্যই আমাদের কাজ করা উচিত। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা একটি চ্যালেঞ্জিং জায়গা কারণ মানুষকে ডিল করতে হয় এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশে যেহেতু অনেক সাইকোলজিস্ট নেই, সেখানে হিউম্যান রিসোর্সের একটা অসুবিধা থাকে সেজন্য আমরা একই সঙ্গে টেকনোলজি-ও এনেছি যাতে টেকনোলজি এবং মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা এ কাজটা করতে পারি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: ‘মনের বন্ধু’ ভোগ বিজনেস-এর এই সম্মাননা ছাড়াও আর কী কী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও স্বীকৃতি পেয়েছে? মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

তৌহিদা শিরোপা: ভোগ বিজনেস ইনোভেটর লিস্টে আসা ছাড়াও এ বছরেই আমরা টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জে যাবার পর সেখানে এ বছর গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং একই সঙ্গে ইউএন উইমেন-এর এশিয়া-প্যাসিফিক রিজওন-এ ‘উওমেন এম্পাওয়ারমেন্ট প্রিন্সিপাল অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। আমরা আইসিটি ডিভিশনের ‘কল ফর নেশন’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমরা একই সঙ্গে ডেইলি স্টার এবং সিএসআর উইন্ডো বাংলাদেশের আয়োজিত ‘ইয়াং হিউমেনিটেরিয়ান’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। কমনওয়েলথ ডিজিটাল হেলথ অ্যাওয়ার্ডসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার আমরা পেয়েছি। শুরুতেও আমি বলেছিলাম যে আমরা আসলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেখানে মানুষ কথা বলতে কোন প্রকার দ্বিধাগ্রস্থ হবেন না, জড়তা থাকবে না । অন্য সব যে কোনো বিষয়ের মতো সে প্রতিদিন ভালো থাকার জন্য বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে, এটা নিয়ে কাজ করবে এবং ভালো দিন, খারাপ দিনে শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তার প্রথম যে নামটা মনে আসবে সেটা হলো ‘মনের বন্ধু’।‘মনের বন্ধু’ মানুষের সেই দোরগোড়ায় যেতে চায়।

XS
SM
MD
LG