অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জাতিসংঘে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ


আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।

আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১৫ এপ্রিল থেকে এই ফোরামের ২৩তম অধিবেশন শুরু হয়েছে; চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের আওতায়, আদিবাসী সংক্রান্ত স্থায়ী ফোরাম বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করে।

চলমান আদিবাসী সংক্রান্ত স্থায়ী ফোরামেন অধিবেশনে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন।

অধিবেশনে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করছে। প্রতিনিধি দলে নয়েছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়রাম্যান সুপ্রদীপ চাকমা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধিরা।

সচিব মশিউর রহমান অধিবেশনে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের জনগনের মধ্যে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সমঅধিকার প্রদান করেছে। গত ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের, দেশের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো জানান, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মোট ৭২টি ধারার মধ্যে, ইতোমধ্যে ৬৫টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৪টি ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

এছাড়া, পার্বত্য চট্রগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা উদ্যোগসহ ওই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ফোরামকে অবহিত করেন সচিব মশিউর রহমান।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলায় ৩ জন প্রথাগত সার্কেল চিফ নানাবিধ প্রশাসনিক ও আইনি কর্তৃত্ব ভোগ করেন এবং প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত হন বলে উল্লেখ করেন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।

তিনি ফোরামে জানান যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওই অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

“স্পষ্টতই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর থেকে অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য পরিবর্তন ঘটেছে;” বলেন সচিব মশিউর রহমান। বলেন, সরকার আইন প্রণয়ন করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য, রক্ষা ও প্রচারের জন্য বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে।

ফেরামে বাংলাদেশর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের নিজ নিজ ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ হারে কোটা সংরক্ষিত আছে।

বর্তমানে, জাতীয় সংসদে ৪ জন এবং মন্ত্রিসভায় ১ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য রয়েছেন বলে ফোরামকে অবহিত করেন সচিব মশিউর রহমান।

XS
SM
MD
LG