অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন: ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই’


ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর ভবন। এপি ফাইল ছবি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর ভবন। এপি ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত; দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস করে না বা তুলনা করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন খবর রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, বিধিবহির্ভূত ধরপাকড়ের বিষয়টি এসেছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, মতপ্রকাশে বাধা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আরো বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এমন কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে সরকার গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বা সরকারি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি এবং ঘটনাগুলো তদন্তে স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বলা হয় প্রতিবেদনে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিগত বছরের তুলনায় কমেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, হয়রানি ও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের ভয়ে সংবাদমাধ্যমকর্মী ও ব্লগাররা সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আরো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। গত ২০২৩ সালের হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে।

প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।

প্রায় ৫ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। মানবাধিকার প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন ও বিভিন্ন দেশের মিশনে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটে তাদের সহকর্মীদের বেশ কিছু মাসের কাজের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হলে, কংগ্রেস, নির্বাহী বিভাগ ও অভিবাসন আদালতকে সহায়তা করে।

মানবাধিকার প্রতিবেদন সুশীল সমাজের কাজ সম্পর্কেও অবহিত করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে, মানবাধিকার রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা, স্কলার, অভিবাসন বিচারক, আশ্রয় কর্মকর্তা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সরকার।

অন্যান্য দেশের প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি state.gov এ পাওয়া যাবে।

XS
SM
MD
LG