অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন, বললেন রিজভী


বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের অবিচার প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।”

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দানসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রিজভী।

“যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন;” রিজভী যোগ করেন।

গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। রিজভী আরো বলেন। তিনি আরো জানান, ১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে; আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিলো ৪টি মামলা।

“শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন;” রিজভী বলেন।

তিনি আরো বলেন, “আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত; দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস করে না বা তুলনা করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন খবর রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, বিধিবহির্ভূত ধরপাকড়ের বিষয়টি এসেছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, মতপ্রকাশে বাধা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, শান্তিপূর্ণ সভা–সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আরো বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এমন কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে সরকার গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার বা সরকারি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিধিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি এবং ঘটনাগুলো তদন্তে স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বলা হয় প্রতিবেদনে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিগত বছরের তুলনায় কমেছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছেন। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, হয়রানি ও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের ভয়ে সংবাদমাধ্যমকর্মী ও ব্লগাররা সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আরো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। গত ২০২৩ সালের হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে।

প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।

XS
SM
MD
LG