বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ৫টি দ্বিপক্ষীয় নথি স্বাক্ষর করা হয়। পরে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন।
শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে, স্রেথা থাভিসিনে তাকে স্বাগত জানান। সেখানে থাই কুহ ফা ভবনের সামনের লনে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন।
সম্পর্কের মাইলফলক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার (২৬ এপিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে থাই গভর্নমেন্ট হাউসে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ কথা বলেন।
“আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি; বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে;” বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
এর আগে দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ১টি চুক্তি, ৩টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও ১টি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে দেয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
“আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক; এটি ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে;” আরো বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দু'দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরো আলোচনাকে উৎসাহিত করতে দুপক্ষ সম্মত হয়েছে। একইভাবে, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সফরটি হলো ঢাকার 'প্রতিবেশী' নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরো নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর করতে সাহায্য করবে।এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।”
বিনিয়োগের জন্য আহবান
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণের প্রস্তাব দিয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।”
বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে থাইল্যন্ডের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
উভয় পক্ষ ২০২৪ সালের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। জানান, দু'দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এই ইস্যুতে একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করেছেন।
অন্যান্য বিষয়
কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য দুই দেশের একটি চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই চুক্তির আলোকে, থাই ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মধ্যে মসৃণ যোগাযোগের সুবিধার্থে, ঢাকা ও ব্যাংকক অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ছাড় সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে।
এছাড়া, জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড। অন্য সমঝোতা স্মারকটি হলো শুল্ক বিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে; আর উভয় পক্ষ কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করেছে।
সমুদ্রপথে যোগাযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, দুই পক্ষ রানং বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়ে আলোচনা করেছে। আর, থাইল্যান্ডের ফ্ল্যাগশিপ 'ল্যান্ড ব্রিজ প্রকল্প' বাংলাদেশ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অনুসরণ করছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে; বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে; সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।”
বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড আলোচনা করেছে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; বিমসটেক ১৮০ কোটি জনসংখ্যার জন্য আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি।” রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে, ৬ দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান।