অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জর্জ ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বর্ণবাদ নিরসণের আহবান


টেক্সাসের গার্ডেনস মেমোরিয়াল সেমেট্রিতে মায়ের কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে নিহত জর্জ ফ্লয়েড। ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ।

টেক্সাসের গার্ডেনস মেমোরিয়াল সেমেট্রিতে মায়ের কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে নিহত জর্জ ফ্লয়েড। ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ।

please wait

No media source currently available

0:00 0:06:08 0:00

ভয়েস অব আমেরিকায় আমাদের সহকর্মি মাইক ও সালিভান তার এক প্রতিবেদনে জানান মঙ্গলবার হিউস্টন চার্চে অনুষ্ঠিত হয় ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো অনুষ্ঠানের খবর সরাসরি প্রচার করে। ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। তিনি বলেন, “বর্ণবাদী ঘটনা যেনো না ঘটে আর সেই লক্ষ্য নিয়ে এই মুহুর্ত থেকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের হৃদয় থেকে বর্ণবাদ দূর করতে হবে”।

হিউস্টন পুলিশ অফিসাররা ফ্লয়েডের ক্যাসকেটকে সম্মান জানান। ফ্লয়েডের মৃত্যুর জন্য যে চার পুলিশ অফিসারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের একজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড আল শার্পটন বলেন, “যতোদিন পর্যন্ত আইন ঠিক না হবে, যতোদিন তারা জেলে না যাবে; তাদের বিচার না হবে, তারা এমন ঘটনা আবারো ঘটতে থাকবে”।

হিউস্টনের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আমাদের নিরাশ হবার কিছু নেই, আশা করছি সকলেই এর থেকে শিক্ষা নেবে”।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তিনটি শহরে স্মরণ সভা হয়। ফ্লয়েডের জন্মস্থান নর্থ ক্যারোলাইনা, বেড়ে ওঠার স্থান টেক্সাস এবং মৃত্যুর স্থান মিনেসোটা। সোমবার হিউস্টনে তাঁর ক্যাসকেটে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন হাজার হাজার মানুষ।

ফ্লয়েডের ভাই ফিলোনিজ ফ্লয়েড বলেন, “আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার চাই; আশা করি পৃথিবীর সবাই তাঁকে মনে রাখবেন”।

ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাস্ট্র ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বর্ণবাদ নিরসণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে দাবী উঠেছে তাতে বেশিরভাগই সমর্থন করছেন। তবে এই ঘটনাকে ঘিরে যে সহহিংসতার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। যারা অতীতের বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাস্ট্রে এ ধরনের সহিংস অবস্থা দেখেছেন তাদের অনেকেই ভীত হয়ে পড়েছেন।

লস এন্জেলেসে ১৯৯২ সালে চার পুলিশ একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান আমেরিকানকে বেদমভাবে পিটিয়েছিল। রডনি কিং নামের ঐ আফ্রিকান আমেরিকান শিকার হয়েছিলেন নৃশংসতার। তখন কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃবৃন্দ সোচ্চার হয়েছিলেন বর্ণবাদ অবসানের।

লস এন্জেলেসে আমাদের সহকর্মী এলিজাবেথ লি তার এক প্রতিবেদনে সেই সমসয় লস এন্জেলেসে যারা সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তাদের দুয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

র‍্যাঞ্চো চার্চ অব লিভিং গড এর প্যাস্টর স্টিভ আদারকাওয়া তাঁদের একজন। ঘানা থেকে আসা আদারকাওয়ার কাছে এখানে আসার আগে আমেরিকা বলতে টেলিভিশনে দেখা ঝকঝকে সুন্দর একটি দেশ ছিল।

তিনি বলেন, “চমৎকার সুন্দর রাস্তাঘাট, সুন্দর সুন্দর মানুষজন”।

আমি আফ্রিকার এমন একটি দেশ থেকে আসি যেখানে বর্ণবাদ বলতে কিছুই ছিল না।

কিন্তু আমেরিকা সম্পর্কে তার ধারনা বদলে যায় ৩০ বছর আগে এই দেশে অভিবাসি হয়ে আসার পর।

“মানুষ আমার দিকে অন্যভাবে তাকায়। মানুষজন একটু অন্যভাবে কথা বলে। বিশেষ করে যখন কথার মধ্যে ভাষার এ্যাক্সেন্ট থাকে তখন। আপনার শিক্ষা আছে কি নেই তা কোনো ব্যাপার না। আপনার সামাজিক অবস্থানও কোনো ব্যাপার না। মানুষ তাৎক্ষনিকভাবে আপনাকে নীচে নামিয়ে দেয়”।

নেতিবাচক, ইতিবাচক, উভয় অভিজ্ঞতা তার। লস এন্জেলেসে ১৯৯২ সালে যখন সহিংসতা হয় তখন সেখানেই বাস করতেন তিনি। সেটা দেখেছেন এবং অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলেও বলেন।

“এখন অনেক কমিউনিটি পুলিসিং বেড়েছে। অনেক বদলেছে।”

জয় মাগালা উগান্ডা থেকে আসা তারই মত একজন ধর্মবিশ্বাসী। সেই দাঙ্গার সময় তিনিও লস এন্জেলেসে বসাস করতেন। বললেন, “দিন দিন মানুষ রাজনৈতিকভাবে শুদ্ধ হতে শিখছেন, কিন্তু তার পরও বর্ণবাদ এখনো চলছে”।

“আমার তিনটি ছেলে, যখনই তারা বাইরে যায় আমি একটু চিন্তিত হই; কারন তারা কৃষ্ণাঙ্গ। কোনো বিপদ না হয় এই ভয় পাই। যতোদিন মানুষ এটা না বুঝবে যে সব মানুষই এক, ততোদিন এই বণৃবাদ শেষ হবে না”।

চার্চগুলোর এই প্যাস্টররা বিশ্বাস করেন সকল ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠীর মানুষকে বর্ণবাদ অবসানের জন্যে একত্রে কাজ করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে যে সব মানুষই সমান, শ্রষ্ঠার তৈরী।

XS
SM
MD
LG