অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জাতীয় ৪ নেতা হত্যা: ১৭ বছরেও পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনা যায়নি


জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে বনানী কবরস্থানে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের সমাধিতে ফু
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে বনানী কবরস্থানে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের সমাধিতে ফু

প্রায় ৪৬ বছর আগে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। এই জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হয়েছে ১৭ বছরেরও বেশি সময় আগে। ‘জেলহত্যা মামলা’ খ্যাত এই মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে ১০ জনই পলাতক। এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাকি আসামির মধ্যে দুইজনের অবস্থানের বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। অন্য আসামিরা কোথায় আছেন তার কোনো তথ্য নেই।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। নির্মম এই ঘটনার প্রায় তিন মাস আগে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।এরপরই তার ঘনিষ্ঠ চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

ওই হত্যাযজ্ঞের পরদিন ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।মামলায় সেনাবাহিনীর রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তার নেতৃত্বে চার থেকে পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে প্রবেশ করে জাতীয় নেতাদের হত্যা করে। গুলি করার পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ঘটনার পরদিন মামলা করা হলেও এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেমে ছিল ২১ বছর।

ঘটনার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন(অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসারকে।

২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা দণ্ড থেকে খালাস পান। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি আপিলে খালাস পান।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পরে আপিল করে। আপিল বিভাগ দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কর্নেল (অব.) নূর চৌধুরী কানাডায় এবং লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এই দুইজনকে ফিরিয়ে আনতে দেশ দুটির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।বাকি আসামিদের কে কোথায় আছেন তার স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।

জেলহত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন,"জেলহত্যা মামলার রায় কার্যকর করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। অনেক হত্যাকারীর বিচার হয়েছে, এদেরও হবে। তিনি বলেন, সরকার পলাতক আসামিদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।"

ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার স্মৃতি রক্ষায় স্থাপিত জাদুঘরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ, মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

তানজীম আহমদ সোহেল তাজ বলেন,"আমরা চাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি হোক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বই-পুস্তকে যদি তাদের জীবনীগুলো তুলে ধরা যায় তাহলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।"

রেজাউল করিম বলেন,"হত্যাকাণ্ডের পর একটা তদন্ত কমিশন সে সময় গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো রিপোর্ট আমরা পাইনি। জেলখানায় ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে খুনিরা। তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষের কি ভূমিকা ছিলো এবং তারা কি রিপোর্ট দিয়েছিল সেটা আমরা জানতে চাই।"

জেলহত্যা দিবসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তরফে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG