শাগুফতা নাসরিন কুইন
২০১৮ সালে যে ১০ জন নারী আন্তর্জাতিক সাহসী নারীর পুরস্কারে ভূষিত হন তারা হচ্ছেন আফগানিস্তানের রয়া সাদাত, গুয়েতেমালার অরা এলেনা, হন্ডুরাসের ড.জুলিসা ভিয়ানুয়েভা, ইটালির সিস্টার মারিয়া এলেনা বেরিনি, কাজাকস্তানের আইমান উমারোভা, কসোভোর ড. ফেরিডে রুশিটি, মরিটেনিয়ার লামালুমা সাইদ, রোয়ান্ডার গডেলিভ মুকাসারাসি এবং থাইল্যান্ডের সিরিকান চারোয়েনসিরি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর, ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ বা আন্তর্জাতিক সাহসী নারীর পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে এই ১০ নারীকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলেনিয়া ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে তাদের পুরস্কার দেন।
অনুষ্ঠানের পরে, সম্মানিত ব্যক্তিদের অনেকেই Los Angelesএ যান।
ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদদাতা মাইক ও সালিভ্যান, যারা পুরস্কার পান তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে আমাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন।
সম্মানিত দশ নারীর একজন ছিলেন মরিটেনিয়ার লামালুমা সাইদ। তিনি দাসত্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরে লামালুমা সাইদনাগরিক অধিকারের একজন সক্রিয় কর্মী হন। বর্তমানে তিনি মরিটেনিয়ার জাতীয় আইন পরিষদের একজন ডেপিউটি।
তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কসোভোর ড. ফেরিডে রুশিটি। তিনি কসোভোর একজন চিকিৎসক। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে কসোভোতে যে গণহত্যা, ধর্ষণ আর নিপীড়ন হয় এবং তখন যারা প্রাণে বেচেছেন, তাদের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। সে সময় ইউগোস্লাভ ও সার্ব বাহিনী, আলবেনীয় জাতিগোষ্ঠির লোকজন যারা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সমর্থন দিয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় তাদের লক্ষ্য করে নির্যাতন চালায়।
ড. ফেরিডে রুশিটি বলেন, “মায়েদের, মেয়েদের, শিশুদের, মা বাবাদের কথা আমি শুনেছি। তাদের কাহিনী আমাকে দারুণ ভাবে আমাকে প্রাভাবিত করেছে। আমি তাদের সঙ্গে কেদেছি, আমি তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছি।”
শরণার্থীদের বিশেষ করে মহিলাদের -- সাহায্য করার জন্য ড. ফেরিডে রুশিটিI একটি কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য দেওয়ার কথা তিনি বললেন।
“মানসিক চিকিৎসা, চিকিৎসা, প্রয়োজন মত আইনগত সহায়তা, সামাজিক সহায়তা ও ক্ষমতায়নের জন্য কার্যক্রম ইত্যাদি দেওয়া হয় তাদের। এর কারণ অধিকাংশ মহিলা ও মেয়েরা দুর্ভাগ্যবশত প্রচন্ড দারিদ্র অবস্থায় আছে।”
১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডা গণহত্যার ফলে এক মহিলা, এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন যাতে যারা ওই গণহত্যা চালিয়েছিল তাদের বিচার করা হয়। তিনি রোয়ান্ডার এক সমাজ কর্মী। নাম রোয়ান্ডার গডেলিভ মুকাসারাসি। ওই মহিলার স্বামী ও কন্যাকে হত্যা করা হয়। অনুমান করা হয় যে গডেলিভ মুকাসারাসি একজন সক্রিয়কর্মী বলেই হয়ত তার স্বামী ও কন্যাকে হত্যা করা হয়েছিলো। যারা ধর্ষণের শিকার হন তাদের নিয়ে এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে তিনি এখন কাজ করেন।
গডেলিভ মুকাসারাসি বলেন, “প্রথমে তাদের শনাক্ত করা এবং তারপর তারা যেন ফোরামের সদস্য হন তা নিশ্চিত করা হয়। ফোরামে তারা একত্রিত হতে পারেন এবং ফোরামের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। তারা যে মানসিক ও দৈহিক আঘাত পেয়েছেন তারা তা মোকাবেলা করতে পারেন।”
যারা যৌন সহিংসতার শিকার হন, তাদের পক্ষে, অপরাধীদের বিচার করার জন্য হনডুরাসের একজন forensic pathologist বা রোগবিদ্যাবিৎ এবং কাজাকস্তানের এর একজন ফৌজদারী আইনজীবী, কাজ করে যাচ্ছেন। কাজাকস্তানের আইমান উমারোভা হচ্ছেন ফৌজদারী আইনজীবী। তিনি বললেন, “কাজাক মহিলাদের জন্যে যৌন সহিংসতার কথা বলাটা যেন একটা নিষিদ্ধ ব্যাপার। তাই লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে এখন খোলাখুলি কথা বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আইমান উমারোভা বলেন পুরানো কিছু চিন্তা--ধারণা এখনও রয়েছে তবে তাঁর দেশে এখন যারা সোচ্চার – যারা খোলাখুলি কথা বলেন, তাদের সুরক্ষার জন্য বলিষ্ঠ আইন রয়েছে।
আইনজীবী আইমান উমারোভা বলেন, “কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে মামলা শেষ হচ্ছে তবে যারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন তারা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।”
আইনজীবী আইমান উমারোভা তা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
Los Angeles forum এর সঞ্চালক বলেন এই মহিলারা, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য অন্যান্যদের অনুপ্রাণিত করেন।
NATION BUILDER সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়া এন্ড্রেস বলেন, “এই মহিলাদের যে সব অভিজ্ঞতা, তারা তাদের দেশে যা করেছেন সে অনুপাতে হয়ত কিছু ঘটনা তেমন বড় মনে হয়না। কিন্তু আপনি যখন মহিলাদের বা মেয়েদের দমন করেন তা যেখানেই হোক, সারা বিশ্বে তার একটা নাটকীয় প্রভাব পড়ে।”
লিয়া এন্ড্রেস বলেন এই মহিলা সক্রিয়কর্মীরা সারা বিশ্বে প্রভাব রাখছেন।