অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রতিকুলতা বাড়ছে বিশ্বের সাংবাদিক সমাজের সামনে


প্রতি বছর ৩রা মে পালিত হয় বিশ্ব গনমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস। নানা ধরনের প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার প্রবনতা বাড়ছে গোটা বিশ্বের সাংবাদিক সমাজের সামনে। কেনো মুক্ত গনমাধ্যম প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করেছেন ভয়েস অব আমেরিকার সহকর্মী জেসুসেহমেহ, তার রিপোর্টে। ভয়েস অব আমেরিকার কন্ট্রিবিউটর গ্রেটা ভ্যান সাস্টারেনের এ সপ্তাহের প্লাগড ইনে বিষয়টি উঠে আসে।

প্রতি বছর ৩রা মে পালিত হয় বিশ্ব গনমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস। নানা ধরনের প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার প্রবনতা বাড়ছে গোটা বিশ্বের সাংবাদিক সমাজের সামনে। কেনো মুক্ত গনমাধ্যম প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করেছেন ভয়েস অব আমেরিকার সহকর্মী জেসুসেহমেহ, তার রিপোর্টে। ভয়েস অব আমেরিকার কন্ট্রিবিউটর গ্রেটা ভ্যান সাস্টারেনের এ সপ্তাহের প্লাগড ইনে বিষয়টি উঠে আসে। সেলিম হোসেন শোনাচ্ছেন বিস্তারিত।

please wait

No media source currently available

0:00 0:07:25 0:00

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের তথ্য আনুযায়ী গনমাধ্যমের স্বাধীনতা দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে। সাংবাদিকদের কাজকর্ম কঠিন হয়ে উঠছে, নানা জটিলতার মুখোমুখী হচ্ছেন বিশ্বব্যাপি সাংবাদিকরা।

গোটা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা বিভিন্ন সরকার ও প্রভাবশালী মহলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। চাপ বাড়ছে গনমাধ্যমের ওপর। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গনমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে। চাপের মুখে রয়েছেন সাংবাদিকরা। যে গনমাধ্যমকে বলা হয় গনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান একটি ভিত্তি- তার ওপর চাপ বৃদ্ধি গনতন্ত্রের সুস্থ্য বিকাশের জন্য অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন Committee to Protect Journalists এর Deputy Exec. Director, Robert Mahoney, “যে কোনো দেশের সরকারকে জবাবদিহি করতে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার যারা তারা হচ্ছেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের লেখনীর কারনেই সরকারের স্বচ্ছতার বিষয় পরিস্কার হয়। মানুষের অধিকার, তাদের করের অর্থ কিভাবে ব্যায় হয় এসব উঠে আসে সাংবাদিকদের লেখায়। সাংবাদিকদের ভূমিকা না থাকলে যে কোনো সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে। বিস্তার লাভ করতে পারে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম”।

সাইবার হামলা গ্রেফতার অপহরনসহ নানাভাবে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের দমন করার প্রয়াস চলছে। কোনো কোনো ক্ষ্রেত্রে সাংবাদিকরা গুম হয়ে যাচ্ছেন, খুন হচ্ছেন।

সাংবাদিক নির্যাতনের শীর্ষ দেশুগলোর মধ্যে চীন ও উত্তর কোরিয়ার নাম সবার ওপরে। যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের অবস্থান আগের তুলনায় খারাপ। গনমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে। গনমাধ্যমের পরিবেশের আগের অবস্থার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অবস্থা নেমে গেছে ৩ পেয়ন্ট। গনমাধ্যম সম্পর্কে ফেক নিউজ- শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রের গনমাধ্যমে আগের তুলনায় বেড়েছে।

তার পরও সাংবাদিকরা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সাংবাদিকদের অধিকার শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করা আছে বলে সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে তারা কাজ করে চলেছেন।

ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক এ্যামেন্দা বেনেট বলেন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে এটি একটি বড় পার্থক্য, “যুক্তরাষ্ট্র ও অপরাপর দেশের সাংযবাদিকদের মধ্যে এটি একটি বড় পার্থক্য। আইনের শাষন বড় একটি ব্যাপার। এখানে আইনের শাষন বলবৎ এবং সকলেই তার প্রতি সম্মান করেন। আর এই কারনেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোটা বিশ্বের এ বিষযটি নিয়ে বড় একটি পার্থক্য বিরাজ করে। উদাহরনস্বরূপ – ভয়েস অব আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান, তবে এখানে সাংবাদিকরা আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত- সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত। আমাদের কন্ঠ সত্যিকারভাবেই মুক্ত”।

ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে, গনমাধ্যমের ওপর অব্যাহতভাবে হুমকী দিয়ে চলেন- যা গোটা জাতির জন্যে আশংকার কারন। এ কারনে ফিলিপাইনে, এশিয়ার মধ্যে গনমাধ্যমের ওপর চাপ সবচেয়ে বেশী। মিডিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে দুতের্তের চাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ গনমাধ্যম Rappler হচ্ছে।

র‍্যাপলারের সিইও ও নির্বাহী সম্পাদক মারিয়া রেসার মতে, “আপনি যদি গত ১৪ মাসের খতিয়ান দেখেন- ফিলিপাইন সরকার আমাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা দিয়েছে। দুই মাসে আমার ৮বার জামিনের আবেদন করতে হয়েছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহে আমাকে দুবার গ্রেফতার করা হয়েছে্ – একবার জেলে নেয়া হয়েছে। এটি গনমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের একটি বড় উদাহরন”।

এপ্রিলে মিয়ারনমারের শীর্ষ আদালত রয়টারের দুই সাংবাদিককে ৭ বছরের জেল দিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতনের খবর লেখার কারনে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক ষ্টিফেন জে এ্যডলার এ নিয়ে কথা বলেন, “ঐ মামলা পরিস্কারভাবে বানানো। ঘটনা সবারই জানা। একজন পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন তার কাছে গ্রেফতারের বিষয়ে অনুমতিপত্র আছে। তার সে নোট পুড়ে গেছে। আরেকজন হাতে লেখা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন এটা গ্রেফতারের অনুমতিপত্র। তৃতীয় একজন বলেন তাদের কাছে নির্দেশ আছে সাংবাদিকদের ধরার। এটা পরিস্কার যে তারা ঐ খুন নির্যাতনের খবর কভার করছিলো বলে ধরা হয়েছে”।

নরওয়ে এ বিষয়ে সবার শির্ষে। তবে বিশ্বের অনেক স্থানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আগের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে নাগরিক সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসার কারনে মানুষের বাক স্বাধীনতা প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গনমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক সুখকর নয়। ইথিওপিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ গনমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। দেশটিতে গ্রেফতার হওয়া ব্লগার ও সাংবাদিকদের ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন।

ভয়েস অব আমেরিকার আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক নেগুসে মেংগেশা প্রায় ৪০ বছর পর দেশে ফিরে গিয়ে সেখানকার গনমাধ্যমের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় ৪০ বছর তিনি ইথিওপিয়ায় যেতে পারেন নি। ইথিওপিয়ায় তিনি আবাঞ্চিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি দেশে যান।

XS
SM
MD
LG