অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রবল শীতে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ জন মারা গেছে


যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ এলাকায় চরম ঠান্ডা পড়েছে। দেশের মধ্য পশ্চিমের বহু অঞ্চল পড়েছে এই শীতের কবলে। আমেরিকানরা শত বছর ধরেও এ্যাতো শীত অনুভব করেন নি।

যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ এলাকায় চরম ঠান্ডা পড়েছে। দেশের মধ্য পশ্চিমের বহু অঞ্চল পড়েছে এই শীতের কবলে। আমেরিকানরা শত বছর ধরেও এ্যাতো শীত অনুভব করেন নি। ঠান্ডার কারনে বহু রাজ্যের সরকারী বেসরকারী অফিসের কাজকর্মের স্বাভাবিক নিয়ম বদলানো হয়েছে। স্কুল কলেজের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে শীতের কারনে মারা গেছে এ পর্যন্ত ১০ জন। এ নিয়ে সহকর্মী জ্লাটিজা হোকের প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে নিউইয়র্ক, শিকাগো, নিউজার্সি রাজ্যের কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন সেলিম হোসেন।

please wait

No media source currently available

0:00 0:09:18 0:00

মিনিয়েপলিস, মিনেসোটার মতো কিছু স্থানে ঠান্ডা বাতাস এবং হিমাংকের নীচে থাকা তাপমাত্রায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। রাস্তায় মানুষ ও গাড়ী কম হলেও একেবারে যে নেই তা নয়।

মিনিয়েপলিসের অধিবাসী কেলভিন কেমন আছেন প্রশ্নে বললেন, “ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। এমন অবস্থা আগে কখনো অনুভব করিনি।

তবে খারাপ লাগছে না। মিনেসোটায় আমরা ঠান্ডার সঙ্গে বেশ পরিচিত। ঠান্ডা আমরা পছন্দ করি”।

আগামী কয়েক দিন চলবে এই শিতল আবহাওয়া। যুক্তরাস্ট্রের ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি মানুষ এই ঠান্ডার কবলে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ মানুষ এই শীতল তাপমাত্রার মধ্যে থাকছেন। উত্তরপূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ তুষারাবৃত রয়েছেন।

ইন্ডিয়ানাপলিসের মেয়র জো হগসেট এবারকার শিত সম্পর্কে বলেন, “একেই বলে প্রকৃত ঠান্ডা। এর সঙ্গে শীতল বাতাস যোগ করলে তাপমাত্রা এ্যাতো ঠান্ডা হয় যাতে বিপদজনক অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়”। ইন্ডিয়ানাপলিসের মেয়রের মতো সিটির অপরাপর কর্মকর্তাদেরও একই মত। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ তাদের। মেয়র যেমনটি বলেন, “কারো যদি বাইরে যাওয়ার জরুরী দরকার না থাকে, বাইরে যাবেন না। হাইপোথার্মিয়ার মতো ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। ঝুঁকি নেবেন না”। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে কোনো ধরনের ঠান্ডা জনিত জরুরী অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ড. টম ওয়াটার্স বলেন, “এ ধরনের অবস্থায় রাস্তার মধ্য গাড়ীতে আটকা পড়ার খবর আমরা হরহামেশাই পাই। তখন আমরা ভাবি আহ আমার যেনো কখনো এ অবস্থা না হয়। তাই বলতে চাই, এই ভয়াবহ শীতে আপনারা আগেই প্রস্তুত থাকবেন, নিরাপদ ব্যবস্থা রাখবেন গাড়ীতেই। কম্বল, হ্যান্ড গ্লাভস এসব”।

ইলিনয়, মিশিগান ও উইসকনসিনের গভর্ণরেরা ওইসব রাজ্যে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। কিছু কিছু জেলায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। মেইল ডেলিভারি, ট্রাশ কালেকশন, যানবাহন ও বিভিন্ন সরকারী সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে প্রবল ঠান্ডার কারনে। জরুরী বিভাগের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন যে কোনো অবস্থা মোকাবেলার জন্যে।

ডেট্রয়ট ওয়াটার এ্যান্ড সুয়ারেজ কর্মকর্তা ব্রায়ান পেকিনপগের মতে, “ডেট্রয়েট শহরে পানি সংক্রান্ত জরুরী কল পাচ্ছি আমরা। ২৬টি কল পেয়েছি। কিছুক্ষন পর পরই জরুরী কল আসছে। আবহাওয়ার এ ধরনের হঠাৎ জরুরী অবস্থা, সেটা ঠান্ডা বা গরম যে কারনেই হোক- পানির লাইনের ক্ষতি হয়; লিক হয়”।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন উত্তর মেরুতে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারনে যুক্তরাষ্ট্রে এবার এই রেকর্ড পরিমানে ঠান্ডা পড়েছে। বলা হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার উষ্ণ বায়ুর একটি ঝড়, শীতল বায়ুকে উত্তর আমেরিকার দিকে তাড়িয়ে আনার কারনে এই প্রবল শীত পড়েছে বলে মনে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশী আমেরিকানদের বেশিরভাগের জন্যেই এই প্রবল শীতের অভিজ্ঞতা প্রথম।

কেমন লাগছে এমন প্রশ্নে নিউজার্সির এনাম চৌধুরী বললেন, ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। এ্যাতো ঠান্ডা আগে কখনো অনুভব করিনি।

নিউজার্সিরই ফারাহ হাসিন বললেন চরম এই ঠান্ডায় তার আশেপাশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডার কারনে এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেন নি তিনি।

বছর দুয়েক হলৌ নিউইয়র্কে বসবাস করছেন কামরুল ইসলাম সনি। যুক্তরাষ্ট্রে এটি তার দ্বিতীয় শীতকাল। কেমন অনুভূতি এ প্রশ্নে বললেন, কষ্ট করে সহ্য করতে হচ্ছে। অন্য মানুষের মতোই নিজেদেরকে অভ্যস্থ্য করার চেষ্টা করছি।

যেসব রাজ্যে সবচেয়ে বেশী শীত পড়েছে, ইলিনয় তার একটি। ইলিনয়ের শিকাগো শহরে বসবাস করেন নজরুল ইসলাম হিরন।

কেমন অবস্থা তার শহরে এ প্রশ্নে তিনি জানালেন এক দিনে ঠান্ডায় শিকাগোয় ৭ জন মারা গেছে। জরুরী আবস্থা জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন অল্প কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে তারা আশা করছেন। এ অবস্থায় সবাইকে সাবধান ও নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG