গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, আরএসএফ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারী সাংবাদিকতার পরিবেশ সংকুচিত করেছে। উপরন্তু বর্ধিত সংখ্যক দেশে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।
রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্সের বার্ষিক প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-এ সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের অবস্থা সম্পর্কে খুব কম সুসংবাদ রয়েছে। গত বছরের চেয়ে সামান্য পরিবর্তন দেখা গেলেও, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার সামগ্রিক সূচক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার সামগ্রিক সূচকে, নরওয়ে একটানা পঞ্চম বছরের মতো প্রথম অবস্থানে রয়েছে। কোস্টারিকাসহ নরডিক দেশগুলি আবারো সূচকের শীর্ষে রয়েছে; তুর্কমেনিস্তান, চীন এবং জিবুতি তার পেছনে। উত্তর কোরিয়ার অবস্থান তালিকায় ১৮০তম অর্থাৎ সর্বশেষে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০র মধ্যে ১৫২তে। বলা হয়েছে করোনাভাইরাস সংকট এবং লকডাউনসহ নানা কারণে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ এবং জনগণের আক্রমণ বেড়ে গেছে। বহু সংখ্যক সাংবাদিক, ব্লগার, কার্টুনিস্ট, গ্রেফতার হয়েছেন। করোনা মহামারি সম্পর্কে লেখালেখির জন্যে অনেকেই বিচারের মুখোমুখি পড়েছেন।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল সিকুরিটি। এতে বলা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবরের সাজা হিসাবে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয়া যাবে। এতে করে সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করে কাজ করতে হয়।
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশর ক্ষমতায় আসার পড় থেকে সরকার গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। সাংবাদিকদেরকে দলীয় কর্মী বলে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের দুটি প্রধান গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে সরকারি সংবাদ সম্মেলনে আসার অনুমতি দেয়া হয়নি। দুর্নীতি ও অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টের জন্যে অনেক সাংবাদিকে নানা হামলা ও সহিংসতার শিকার হতে হয়।
আরএসএফ এর গবেষণায় দেখা গেছে করোনভাইরাস মহামারী গণমাধ্যম দমনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। আরএসএফ কর্মকর্তা পলিন অ্যাডেস-মেভেল বলেন, “১৮০ টি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন করে করা এই বছরের প্রতিবেদনে দেখা যায় সাংবাদিকতা-যাকে তর্কাতীতভাবে অপতথ্যের বিরুদ্ধে সেরা ভ্যাকসিন বলা হয়; তা কয়েকটি দেশে সম্পূর্ণরূপে বা গুরুতরভাবে অবরুদ্ধ।"
তালিকার ১১১তম এবং ১৪৮তম স্থানে থাকা যথাক্রমে ব্রাজিল এবং ভেনিজুয়েলার নেতারা করোনা ভাইরাসের মিথ্যা প্রতিকার দাবি করেছিলেন। সেখানকার তদন্তকারী সাংবাদিকরা সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
ইরান, মিশর এবং আলজেরিয়ার মতো দেশগুলিতে কভিড -১৯ সম্পর্কে খবর প্রকাশ করায় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। অ্যাডস-মেভেল বলেছেন বিভিন্ন দেশের সরকার সাংবাদিকদের বিভিন্ন কারণে দমন করেছেন।
“যদিও সারা বিশ্বজুড়ে লকডাউন ছিল, সাংবাদিকরা যারা বিক্ষোভ বা এ ধরনের বিস্ময় কভার করেছেন তাঁরা আক্রমনের শিকার এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন”।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এর প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা। তার পরও জার্মানির সাংবাদিকরা গত বছর উগ্রবাদী ও ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের আক্রমনের শিকার রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এর হোয়াইট জন খ্যাত এই অঞ্চলেও সাংবাদিকরা স্বাধীন নন।
আরএসএফ এর রিপোর্ট অনুসারে আমেরিকাতেও গণমাধ্যমের পরিবেশ উদ্বেগজনক। আফ্রিকার গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার একটি মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে। বুরুন্ডি, সিয়েরা লিওন এবং মালি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার সূচকে অপরা উঠে এসেছে। তবে ইথিওপিয়ার তিগ্রে অঞ্চলে সংঘাত থাকায় তাঁরা ১০১ তম স্থানে চলে গেছে।