পুলিশ, আদালত ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে- ২০০৯ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার। বেশি মামলা হয়েছে ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে। মামলা হয়েছে কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়েও। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।
যদিও বিএনপি আগাগোড়াই বলে আসছে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “যেকোনো ইস্যুতেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে সরকার মামলা করছে, হামলা চালাচ্ছে। সভা-সমাবেশ বানচাল করে দিচ্ছে। এটাই প্রমাণ করছে সরকারের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান। এসব মূলত সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং স্বৈরতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। আর বিরোধী দলকে নির্মূল করার ব্যাপার তো আছেই”।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্) হায়দার আলী খান বলেছেন, "এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো মামলা হয় না। যখন কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী কোনো ধরনের সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করে থাকে তখনই এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে মামলা হয়। বিএনপির বেলায়ও এটাই হয়েছে। এটাকে বলে আমলযোগ্য অপরাধ"।
কারারুদ্ধ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৭টি। এরমধ্যে দুটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে ১৬টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মূলত মামলা হয়েছে দুর্নীতি, মানহানি, রাষ্ট্রদ্রোহসহ হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে ৬৭টি। তিনি বর্তমানে লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৮৬টি। এরমধ্যে ৩৫টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে উচ্চ আদালতে। বাকিগুলো চলমান।
এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ১১টি। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ৪টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ৬টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৫৪টি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৫৯টি। নজরুল ইসলাম খানের ৩টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ১৩টি। সেলিমা রহমানের ৬টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ৯টি এবং ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত সালাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৩৪টি। সবচাইতে বেশি মামলা হয়েছে দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ২৫৭টি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর(অব.) হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৪টি, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের ৪টি, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৬টি, আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ৪টি, বরকত উল্লাহ বুলুর ২৭টি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ৬টি এবং মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২৪টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের ১২৩টি, আব্দুস সালামের ৩৭টি, মিজানুর রহমান মিনুর ৩৭টি, জয়নাল আবেদিন ফারুকের ২৩টি, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের ১৩টি, মজিবুর রহমান সারোয়ারের ৫৭টি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ১৩৪টি ও খায়রুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে ৫৭টি মামলা রয়েছে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ১০৭টি, আসাদুল হাবিব দুলুর ৫৭টি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফের ৪৭টি, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের ৮৬, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ১৫৩, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের ৫৩টি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে।