অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিএসএফ’র গুলিতে সিলেট সীমান্তে ২ বাংলাদেশি নিহত


ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের ঢালচরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে টহল দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬।(ছবি-এপি/অনুপম নাথ)
ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের ঢালচরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে টহল দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬।(ছবি-এপি/অনুপম নাথ)

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।বুধবার সকালে তাদের নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের ৩১ নম্বর পিলারের কাছে ওই গুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত দু’জন হলেন- কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামের নকিব আলীর ছেলে আসকর ও হান্নান মিয়ার ছেলে আরিফ। ঠিক কখন তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এ বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে তারা গুলির শব্দ শুনেছেন। সকালে দুই ব্যক্তির লাশ সীমান্তের ওপারে ছড়ায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, নিহত আসকর আলী আছই (২৫) এবং আরিফ মিয়ার (২২) পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্থানীয় ফাঁড়িকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হয়।

ডোনা সীমান্ত বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের অধীন। ডোনা ফাঁড়ি সূত্রে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, নিহত দু’জনের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার একশ' ছাপ্পান্ন কিলোমিটারের বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে, যার বেশিরভাগই চিহ্নিত এবং কাঁটাতারে ঘেরা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায়শই গুলি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।প্রায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর বিএসএফ দাবি করে যে, বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে, তাদের ঠেকাতে বাধ্য হয়ে গুলি করা হয়। চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সীমান্তরক্ষীদের আক্রমণের অভিযোগও করা হয়। তবে বুধবারের ঘটনায় ভারতের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য আসেনি।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের অন্যতম সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সীমান্তে গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু হয়।গুলিতে আহত হন ৪ জন এবং ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তিনজনকে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্তে হত্যা এবং নির্যাতনের আরও ঘটনা ঘটেছে।

২০২০ সালে সীমান্তে বিএসএফ'র গুলিতে মোট ৪২ জন বাংলাদেশি নিহত এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করেছিল একাধিক মানবাধিকার সংস্থা।

বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের অঙ্গীকার রয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রেকর্ড মতে, ২০১৯ সালে বিএসএফ’র হাতে প্রাণ গেছে ৪৩ জন বাংলাদেশির, যাদের মধ্যে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। ওই বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় সংসদে ১০ বছরের সীমান্ত হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। যাতে বলা হয়- ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ'র হাতে মোট ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বছরভিত্তিক সরকারি হিসাব মতে, ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ’১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ জন।

XS
SM
MD
LG