'বুল্লি বাই' অ্যাপ মামলায় বেঙ্গালুরু থেকে ২১ বছর বয়সী এক ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। এই কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরাখণ্ড থেকে এক মহিলাকেও আটক করা হয়েছে।
'বুল্লি বাই' অ্যাপের মাধ্যমে ভারতের মুসলিম নারীদের ছবি ও বিবরণ পোস্ট করে নিলামে তোলা হচ্ছিল। অ্যাপটি নিষিদ্ধ হয়েছে জানাজানি হওয়ার পরে।
কী এই 'বুল্লি বাই' অ্যাপ?
'বুল্লি বাই' নামের এই অ্যাপটি একটি ওপেন সোর্স অ্যাপ, যা গিটহাব নামে একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অপারেট হত। এই নিয়ে গত কয়েকমাসে মুসলিম নারীদের 'নিলাম' বা 'বিক্রি'র মত অবমাননাকার ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটল ভারতে। 'বুল্লি বাই' অ্যাপটিতে ১০০ জনেরও বেশি মহিলাকে নিশানা করা হয়েছিল। এই অ্যাপ খুললে মুসলিম মহিলাদের মুখমন্ডলের ছবি দেখা যেত, টুইটার থেকে নেওয়া ছবি এখানে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
প্রথম বার গত বছর জুলাই মাসে সামনে এসেছিল একই ধরনেই এক অ্যাপ, 'সুল্লি ডিলস'। সেই সময় এই অ্যাপে ৮০ জনের বেশি মুসলিম নারীর প্রোফাইল বানানো হয়েছিল।
'বুল্লি' বা 'সুল্লি' দুটোই স্থানীয় ভাষায় অবমাননাকর 'স্ল্যাং'। এই দুই অ্যাপের কোনও ক্ষেত্রেই প্রকৃত বিক্রি বা টাকা লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এই অ্যাপ প্রস্তুতকারকদের উদ্দেশ ছিল মুসলিম নারীদের অবমাননা করা। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এই অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে গিটহাব। অন্যদিকে, পুলিশও তদন্ত চালাচ্ছে ঘটনার। বারবার এইরকম একই ঘটনা ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে স্বভাবতই।
এই নিন্দাজনক কাজের নিশানায় ছিলেন যেমন বহু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত মহিলারা, তেমনই ছিলেন সাধারণ মহিলারাও। সাংবাদিক থেকে অভিনেত্রী এমন বহু মানুষকেই নিশানা করে এই অ্যাপে 'নিলাম'-এ তোলা হয়।
যাদের ছবি আপলোড করা হয়েছে অ্যাপে তাদের অনেকেই টুইট করেছেন যে তারা বিষয়টিতে আহত ও আতঙ্কিত। অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িত মানুষদের কঠোর শাস্তি দেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেশের বহু মানুষ ঘটনার নিন্দা করে টুইট করছেন। রাহুল গান্ধী, মেহবুব মুফতি, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর মত রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা টুইট করে বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শনিবার জানিয়েছিলেন যে ওই অ্যাপটিতে যারা আপলোড করেছে গিটহাব তাদের ব্লক করেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশ সাইবার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে।
শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী মুম্বই পুলিশ ও মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র তথা তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী সতেজ পাটিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ‘বুল্লি বাই’-এর ব্যাপারে। অনলাইনে এমন নারীবিদ্বেষ ও মুসলিম মহিলাদের প্রতি সাম্প্রদায়িক ঘৃণা, বিদ্বেষের পরিপ্রক্ষিতে পাটিল দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন মুম্বই পুলিশকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুম্বই পুলিশের সাইবার শাখা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (এ), ১৫৩ (বি), ২৯৫ (এ), ৫০৯, ৫০০ ধারা ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারায় ট্যুইটার হ্যান্ডল হোল্ডার ও 'বুল্লি অ্যাপ' ডেভেলপারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।
ধারাগুলি বিদ্বেষ ছড়ানো, জাতীয় সংহতির পরিপন্থী কাজ, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, যৌন হয়রানি, মহিলার পিছু নেওয়া, মানহানি সংক্রান্ত। আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ অনুচ্ছেদটি অশালীন কন্টেন্ট প্রকাশ ও সম্প্রচার সংক্রান্ত।
