অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের খাবার গুরুত্ব হারাচ্ছে


লন্ডনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। (ছবি- মতিউর রহমান চৌধুরী)

বিলেতে কারি শিল্প ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে। একদিকে কোভিডের ধকল অন্যদিকে কর্মীর অভাব। এর ফলে জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই কারিশিল্প। এক সময় প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল এই শিল্পে। নামে ইন্ডিয়ান, আসলে বাংলাদেশি। বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের মালিক বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের।

১৯২৬ সনে প্রথম ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট চালু হয় লন্ডনের রিজেন্ট স্ট্রিটে। বলা হয়ে থাকে, ১৯৭০ থেকে ৮০'র দশক ছিল ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের সোনালী যুগ। সে সময় রেস্টুরেন্ট ছিল প্রায় তিন হাজার। ৯০ সনে ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১১ সনে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বৃটিশ অর্থনীতিতে কারিশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। সে সময় প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন পাউন্ডের ব্যবসা হতো এসব রেস্টুরেন্টে। কোভিডের কারণে প্রায় পাঁচশ'র বেশি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক রেস্টুরেন্ট হয়ে গেছে টেকওয়ে। এর মধ্যে অনেকদিন যাবৎ কোনো স্টাফ আনা যাচ্ছে না নানা কারণে। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন পার হতে হলে ইংরেজি জানা চাই। যারা শেফের কাজ করেন তারা সাধারণত ইংরেজি জানেন না। ফলে তাদেরকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া সত্ত্বেও আনা যাচ্ছে না। এ নিয়ে কারিশিল্পের মালিকদের মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা।

বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মিঠু চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে স্টাফের সংকট বেশি, যে কারণে কাস্টমারদের সার্ভিস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বৃটিশ কারিশিল্পের প্রতিষ্ঠাতা ও বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট এনাম আলী এমবিই-র মতে, ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সহজ না হলে এই শিল্পকে বাঁচানো খুব কঠিন। তিনি বলেন, ইংরেজি না জানার কারণে অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট থাকা সত্ত্বেও ভিসা পাচ্ছেন না। আমরা বৃটিশ সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। যারা এদেশে আসবে তারা তো শুধু কারি রান্না করবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে না। তাই এই শিল্পের স্বার্থে ইমিগ্রেশনের নিয়ম-কানুন কিছুটা শিথিল করা জরুরি।

কারিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, চলমান মহামারি মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করে দিয়েছে। বাড়িতে বসে অনেকে খাবার পেতে বেশি আগ্রহী। অনলাইন ফুড ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একদা লন্ডনের ব্রিকলেন হয়ে উঠেছিল কারিশিল্পের ক্যাপিটাল। বাংলা টাউন হিসেবেই পরিচিত। এখান থেকেই একাধিকবার লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী।

বাংলা টাউন ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল তামাম দুনিয়ায়। বিলেতে আসার পর অনেকেই ব্রিকলেন দেখতে যেতেন। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের খাবার ছিল তাদের কাছে আকর্ষণীয়। সেই কারিশিল্পের ক্যাপিটাল ব্রিকলেনে হাতেগোনা কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। কারিশিল্পের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন । তারা ওয়ার্ক পারমিট আরও সহজ করার দাবি জানিয়ে আসছে।

মহামারি চলাকালে কারিশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চার দফা বৈঠক হয়েছে সরকারের সঙ্গে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার দাবি ছিল অন্যতম। যারা অবৈধভাবে বিলেতে বসবাস করছেন তাদেরকে বৈধ করার দাবিও জোরালো ছিল। বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্মীদেরকে দুই বছরের জন্য ভিসা দেয়ার দাবিতে সোচ্চার। কারিশিল্পের মালিকরা অবশ্য সরকারের অনুদান ও ভ্যাট কমিয়ে পাঁচভাগ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকারের তড়িৎ হস্তক্ষেপ না হলে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যেতো।

XS
SM
MD
LG