অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রত্যাশী ও আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে


অবৈধ অভিবাসিদের প্রবেশ বন্ধ করার বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন সীমান্তের নিয়ন্ত্রন রক্ষা করা কঠিন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন U.S. Border Patrol প্রধান কারলা প্রভোস্ট। তিনি বলেছেন গত বছর মধ্য আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসি ও আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে মাইকেল বোম্যানের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।

অবৈধ অভীবাসিদের প্রবেশ বন্ধে শক্ত ও কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে সেনেট প্যানেলের কাছে দেয়া এক সতর্ক বানীতে কারলা প্রভোস্ট বলেন, বর্তমান অর্থবছরে এ পর্যন্ত দক্ষিন সীমান্ত দিয়ে আসা অভিবাসির সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪। গত অক্টোবরে মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে মধ্য ও দক্ষিন আমেরিকা থেকে আসা অভিবাসি ও আশ্রয়প্রার্থীদের বহরের বহু মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।

গত ২০১৮ সালে ৬৫ হাজার জন আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করে। ৯০ দিনের মধ্যে তাদের আবেদন চুড়ান্ত করার কথা বলা হলেও তা হয়নি।

প্রভোস্ট বলেন গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার পেট্রোল কর্তৃপক্ষের হিসাবে কোনো একটি বছরে এ্যাতো বিশাল সংখ্যায় অভিবাসি প্রবেশের রেকর্ড নেই। তিনি বলেন গত বছর সীমান্তে অপেক্ষমান অভিবাসির বহরে থাকা বহু সংখ্যক শিশু, যাদের অনেকেই অভিভাবকবিহিন; তাদেরকে নিয়ন্ত্রন ও সমন্বয় করতে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষীদের অনেক শ্রম ও সময় নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে সীমান্ত রক্ষীদের কাজের অনেকের ৪০ শতাংশ সময় ব্যায় করতে হচ্ছে অভিভাবকহীন অভিবাসি শিশুদের যত্ন নিতে”।

সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভীবাসন বিষয়ক সেনেট জুডিশিয়ারী সাবকমিটির কাছে দেয়া সতর্ক বার্তায় কারলা প্রভোস্ট উল্লেখ করেন, “সীমান্তে জড়ো হওয়া শিশু ও পরিবারের যত্ন নেয়ার জন্য সীমান্ত রক্ষীদের মূল কাজ থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে আর সেই সুযোগে ঢুকে পড়ছে অসংখ্য অবৈধ অভিবাসি। শুধু অভিবাসি নয়, ঢুকে পড়ছে মাদক চোরাচালানিসহ নানা ধরনের অপরাধীও”।

সীমান্ত নিরাপত্তা কেনো হুমকীর মুখে? প্রভোস্ট বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাস্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাও। কারন যারা যুক্তরাস্ট্রের অবৈধভাবে ঢুকছে, তাদের মধ্যে নানা ধরনের অপরাধীও রয়েছে”।

একই কথা প্রেসিডেন্ট ট্রা্ম্পও বার বারই বলে থাকেন, অভিবাসন বিষয়ক এক বক্তব্যে তিনি বলেন অবৈধ অভিবাসিদের অনেকেই গ্যাং সদস্য।

সেনেট সাবকমিটি চেয়ারম্যান টেক্সাসের রিপাবলিকান সেনেটর জন করনিন, প্রভোস্টের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, “অবশ্যই, এই অবস্থা সত্যিই জরুরী অবস্থা। যদি তা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে তা আরো খারাপের দিকে যাবে”।

সীমান্তে থাকা অভিভাবকবিহিন শিশুদের সহায়তার লক্ষ্যে সেনেটর করনিন, টেক্সাসের ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান হেনরি কুয়েলারকে সাথে নিয়ে Helping Unaccompanied Minors and Alleviating National Emergency (HUMANE) Act নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। তিনি এই বিলটি পাশ করার আহবান জানিয়ে বলেন এতে করে সীমান্ত রক্ষীদের কাজের বাড়তি সময় শিশুদের যত্ন নিয়ে ব্যায় করতে হবে না। তারা তাদের কাজে মনোযোগ দেবেন, তাতে করে সীমান্ত অরক্ষিত থাকবে না। অবৈধ অনুপ্রবেশ কমবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা আরো সুরক্ষিত থাকবে।

এদিকে সিনেট কমিটির ডেমোক্রেট সদস্যরা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন ইসুটি নিয়ে রাজনীতি করছেন। তারা বলছেন ট্রাম্প প্রশাসন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে এই ইসু নিয়ে। কাগজপত্রবিহিন অভিবাসিদের বিষয় ট্রাম্প প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি – শিশুদেরকে বাবা মার কাছ থেকে পৃথক করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা, মধ্য আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সহায়তা বন্ধ করা এসবই এক ধরনের রাজনীতি, বলে মন্তব্য করেন ডেমোক্রেট প্রতিনিধিরা।অভিবাসন বিশেষজ্ঞরাও এমনই কথা বলছেন। ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির আইনের শিক্ষক কারলা ম্যাককান্ডার্স বলেন ২০২০ নির্বাচনকে সামনে রেখেও অভিবাসন নিয়ে কথা বলছেন নেতারা। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন অনেক ক্ষেত্রে। ২০২০ নির্বাচনকে সামনে রেখেও অনেক কাজ করা বা মন্তব্য করা হচ্ছে”।

ইলিনয়ের ডেমোক্রেট সেনেটর ডিক ডারবিন বলেন, “ভুলে যাবেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়কার শাটডাউন বা সরকারী কাজকর্মের আংশিক অচলবাস্থা সৃষ্টি করেছিলেন- কংগ্রেস যেনো তার মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার খরচ পাশ করে সেই লক্ষ্যে। ওই শাটডাউনের কারনে তখন অভিবাসন আদালত বন্ধ ছিল”।

তিনি বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারনেই বরং আমাদের সীমান্ত সুরক্ষা কমেছে। তিনি বহুবারই আমেরিকান মূল্যবোধকে খাটো করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই বলছেন এর জন্য ডেমোক্রেটরা দায়ী।

দুই দলের নেতারাই মনে করেন সীমান্ত সুরক্ষা জরুরী। অভিবাসন সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। U.S. Customs and Border Patrol, Immigration and Customs Enforcement, and the Department of Health and Human Services এসব খাতে অর্থ বরাদ্দ দরকার। সীমান্তে অবৈধ অভিবাবকবিহীন শিশুদের সুরক্ষায় এসব বিভাগগুলোর কর্মকতারা কাজ করে।

এছাড়া Department of Homeland Security কর্মকর্তারা মনে করেন হাজার হাজার আশ্রয় প্রার্থনার মামলা পেন্ডিং পড়ে আছে, অনেক মামলা সমাপ্ত হয়েছে, রায় হয়েছে, আশ্রয় প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে, ডিনাই হয়েছে, কিন্তু তারাও ডিটেনশন সেন্টার বা তাদের কেন্দ্রে রয়েছে। সেগুলোর দ্রুত সমাধান করা দরকার। অভিবাসন নীতির সংস্কার দরকার বলেও তারা মনে করেন।

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ন্যাটালী এ্যাশার বলেন বর্তমান অভিবাসন আইনের দুর্বলতার কারনে বহু অভিবাসি অবৈধভাবে যুক্তরাস্ট্রে আসার সাহস করছেন।

২০১৩ সালে কংগ্রেস শেষবারের মতো অভিবাসন আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে। তখনকার ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত সেনেটে অভিবাসন সংস্কারের একটি বালও পাশ হয়। তবে তখনকার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ তা পাশ করতে ব্যর্থ হয়।

অভিবাসন নীতির সংস্কার না হওয়ার সুবিধা নেয়ার জন্য একদিকে যেমন কাগজপত্রবিহিন অভিবাসিরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করার উৎসাহ পাচ্ছে অন্যদিকে আবার সন্ত্রাসী, মাদক চোরাচালানীরাও এর সুযোগ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকান্ড। এর একটি বিহিত হওয়া দরকার বলেই সবাই মনে করেন।

XS
SM
MD
LG