অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি: বাংলাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ শুরু


ঢাকার একটি রাস্তায় রিকশায় মাস্ক ছাড়া এক ব্যক্তির সঙ্গে একজন পুলিশ সদস্য কথা বলছেন। ১৩ জানুয়ারি ২০২২। (ছবি-এএফপি/মুনির উজ জামান)
ঢাকার একটি রাস্তায় রিকশায় মাস্ক ছাড়া এক ব্যক্তির সঙ্গে একজন পুলিশ সদস্য কথা বলছেন। ১৩ জানুয়ারি ২০২২। (ছবি-এএফপি/মুনির উজ জামান)

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় সরকার আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। এর ফলে দোকানপাট, শপিংমলসহ সর্বত্র মানুষকে মাস্ক পরতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে।

ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও সার্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে যারা এখনো টিকা নেননি তাদেরকে দ্রুত টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স (এনএমএসটি) উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, "যারা এখনও টিকা নেননি দ্রুত তাদের টিকা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমরা স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেয়া শুরু করেছি। টিকা নিলে অন্তত জীবন বাঁচানো যায়।"

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর একটি নতুন রূপ এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

তিনি সবাইকে সরকার আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ সঠিকভাবে অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

বিধিনিষেধগুলো হলো

• সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে;

• দোকান, শপিংমল, বাজার, হোটেল, রেঁস্তোরাসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে;

• অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে;

• রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে;

• ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না;

• স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দরে জাহাজের ক্রুদের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে;

• ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে এবং চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ এর টিকা সনদধারী হতে হবে;

• বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে;

• স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;

• সবার করোনার টিকা ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে;

• কোনো এলাকায় বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

গণপরিবহন

আগামী শনিবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক এবং আগের ভাড়ায় চলবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বিআরটিএ পরিচালক মো. সারওয়ার আলম বলেন, বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করা হবে তবে বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে না।

বুধবার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ট্রেনে ভ্রমণের সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ১৫ জানুয়ারি থেকে ট্রেনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়া ট্রেনের টিকিট প্রদান ও বিক্রির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৯১৬ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১১১ জনে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ১ হাজার ৩০৫ জনে পৌঁছেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এইদিন শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ২৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৩ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে সরকার বেশ কয়েকবার বিধিনিষেধ এবং লকডাউন আরোপ করেছে।

XS
SM
MD
LG