সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর ওপর হামলা বন্ধে তুরস্কের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা না আসা পর্যন্ত এবং ইসলামিক স্টেট পুরোপুরি উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত উত্তর সেরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করবে না। যুক্তরাস্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন একথা বলেন। এ নিয়ে আমাদের কুটনৈতিক সংবাদদাতা সিন্ডি সেইন ও জ্লাটিকা হোকের রিপোর্ট থেকে তথ্য নিয়ে রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
১৯শে ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন সিরিয়া থেকে যুক্তরাস্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করা হবে। সিরিয়া থেকে যুক্তরাস্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করলে কি অবস্থা দাঁড়াবে, ইসলামিক স্টেট জঙ্গী সেখান থেকে পুরোপুরি উৎখাত হয়েছে কিনা, এই অবস্থায় সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা; সেই টুইট বার্তা নিয়ে গত ক’দিন বিভিন্ন মহলে এ ধরণের নানা আলোচনা সমালোচনা হয়।
সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেক টুইট বার্তায় বলেন, সিরিয়া থেকে ক্রমান্বয়ে যুক্তরাস্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এমন সময় এ টুইট প্রকাশ হলো যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন ইসরাইল ও তুরস্কে চারদিনের সফরে রয়েছেন।
রবিবার জন বল্টন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আশ্বস্ত করে বলেছেন সিরিয়া থেকে দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না।
“সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নিযে আমরা আলোচনা করছি; তবে উত্তর পূর্ব সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয় চুড়ান্ত করার আগে আমরা নিশ্চিত করতে চাই সেখান থেকে আইসিস পুরোপুরি উৎখাত হলো কি না বা আবার তাদের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা”।
সাবেক কুর্দি কর্মকর্তা ইদ্রিস নাসান ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন ডিসেম্বরে সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটের পর সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি আসলেও তাঁর সাম্প্রতিক ঘোষণায় আবার শ্বস্তি ফিরে এসেছে।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সাম্প্রতিক টুইট, যেখানে বলা হয়েছে দ্রুত সিরিয়া থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে না এবং আমরা কুর্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো; এই টুইটের পর কুর্দিদের মধ্যে বেশ স্বস্তির ভাব ফিরে এসেছে”।
মঙ্গলবার জন বল্টন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যেকার আলোচনায়, বল্টন এরদোয়ানের কাছে এবই নিশ্চয়তা চাচ্ছেন যেনো তুরস্কের সেনারা কুর্দি যোদ্ধাদেরকে টার্গেট না করে। কুর্দি যোদ্ধারা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
যুক্তরাস্ট্রের পররাস্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক সপ্তাহের সফরে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন। তিনিও এই সফের মিত্রদেরবকে আশ্বস্ত করবেন যে যুক্তরাস্ট্র ওই অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরিয়া থেকে প্রথম পর্বে যুক্তরাস্ট্রের ২০০০ সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। আর এরই মধ্যে তুরস্ক কর্তৃক কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা আসে। সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে আসলে, তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে রাশিয়া ঢুকে পড়তে পারে এমন আশংকা করছেন অনেকেই। ইসরাইল বলছে ইরানও হয়তো এই সুযোগে সেখানে অভিযান চালাতে পারে। অনেকে আবার বলছেন ইসলামিক স্টেট সেখানে আবারো আঘাত হানতে পারে এবং এলাকাটি পুনর্দখলের চেষ্টা করতে পারে।
এসব বিবেচনা করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ক্রমান্বয়ে করা হবে।
“আমরা সিরিয়া থেকে সরে আসছি। আমরা আমাদের সেনাদেরকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করবো। আমি কখনো বলিনি তা আমরা খুব দ্রুত করবো। আমরা আইসিসকে পরাস্ত করবো”।
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষযটি নিয়ে ঐ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টনকে সেখানে পাঠান, তুরস্ক ও ইসরাইলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে।
“ইসরাইল এবং যুক্তরাস্ট্রের অপরাপর মিত্রদের নিরাপত্তাটা আমাদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। একই সঙ্গে এটা নিশ্চিত হওয়া দরকার যে আইসিস বা অন্য যে কোনো জঙ্গী সংগঠন সেখান থেকে সমুলে বিনাশ হয়েছে”।
ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুদ্ধে ইরাক এবং সিরিয়া উভয় দেশেই কুর্দি সেনারা রয়েছেন সবার আগে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করলে তারা বিপদেও পড়বে সবার আগে। সিরিয়ান সরকারী সেনা ও তুরস্ক বাহিনীর হামলার শিকার হবে তারা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়প এরদোয়ান সম্মত হয়েছেন যে তিনি হামলা সাময়িক স্থগিত রাখার আদেশ দেবেন, তবে তা বন্ধ করার নিশ্চয়তা দেননি। বলেছেন ইসলামিক ষ্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে তাদের।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ, কুটনৈতিক তৎপরতা এবং আমেরিকানদের ঘোষণার কারনে আমরা অভিযান স্থগিত রেখেছি, তবে এটি সাময়িক”।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন বলেছেন সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি শুধুমাত্র তখনই শুরু হবে যখন তুরস্ক এই নিশ্চয়তা দেবে যে কুর্দিদের ওপর হামলা করা হবে না। কুর্দি যোদ্ধাদেরকেও তিনি মনোবল না হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে নানা কৌশলে ভালো সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছেন, সে চেষ্টা কুর্দিদের সঙ্গেও করতে পারে এবং এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে, আসাদ সরকারের সঙ্গে কোনো রকমের সমঝোতায় না যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি কুর্দিদেরকে।