যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের জন্য চলা শাটডাউন বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম সাময়িকভাবে আংশিক বন্ধ অবস্থা সাময়িকভাবেই চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেয়া ঐ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রিয় সরকারের ৮ লাখ কর্মী কাজে যোগদান করছেন। আমাদের কংগ্রেশনাল সংবাদদাতা ক্যাথরিন জিপসমের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে কেউ যেনো অবৈধভাবে ঢুকতে না পারে, মাদক চোরাচালানী যেনো বন্ধ হয়, অপরাধী সন্ত্রাসীরা যেনো যুক্তরাষ্ট্রের আসতে না পারে সেই লক্ষ্য সীমান্তে ৩২০০ কিলোমিটার দেয়াল তোলার জন্য ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বা ৫৭০ কোটি ডলার বরাদ্দের জন্য আইনপ্রনেতাদের প্রতি দাবী জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলীয় আইনপ্রনেতারা তাতে রাজী না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যায় বরাদ্দ আটকে যায়। ফলে ২২শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় শাটডাউন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ৮ লাখ কর্মীর অধিকাংশই কাজ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকেন। বেতন ছাড়া। জরুরী কর্মী হিসাবে চেনা হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগের কিছু কর্মী বেতন ছাড়া কাজ করেন। দুই সপ্তাহ পর পর বেতন পেতে অভ্যস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা বেতন মিস করেন দ্বিতীয় দফায়। শাটডাউন প্রলম্বিত হওয়ার এক পর্যায়ে শুক্রবার বিমান নিয়ন্ত্রন কর্মীরা কর্মবিরতিতে যান।
শাটডাউন বন্ধ করে কেন্দ্রিয় সরকারের কাজকর্ম চালূ করার প্রচেষ্টা সেনেটে দুই দফায় ব্যার্থ হয়। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার বিকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেয়াল তোলার অর্থ বরাদ্দে কোনো রকম সমঝোতা না করেই শাটডাউন বন্ধ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম তিন সপ্তাহের জন্য অর্থাৎ ১৫ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চালু করার ঘোষণা দেন।
“আগামী ২১দিন আমি আশা করছি ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান নের্তৃবৃন্দ আস্থার সঙ্গে কাজ করবেন। এটি সকল দলের জন্যে একসঙ্গে কাজ করার একটি সুযোগ যাতে আমাদের এই গোটা, সুন্দর জাতীর উপকার হয়”।
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ২১ দিনের জন্য বেতন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেন আর আইনপ্রনেতারা ২১ রদিন সময় পেলেন সীমান্ত দেয়াল নির্মানে প্রেসিডেন্টের দাবীকৃত অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে।
“দেয়াল বলতে মধ্যযুগীয় দেয়াল নয়; চমৎকার দেয়াল। আমাদের ২ হাজার মাইল কংক্রিট দেয়াল দরকার নেই। সেটি আমরা কখনোই বলিনি”।
প্রায় ৩৬ দিন ধরে চলমান কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের সাময়িক অচলাবস্থা কাটাতে কয়েক দফায় চেষ্টা নেয়া হয় সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসা। কিন্তু তা হয়নি। শাটডাউন বন্ধের পর সেনেট মাইনরিটি নেতা চাক শুমার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন:
“অসঙ্গতিপূর্ন একটি বিষয়কে নিয়েও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে সরকারী কর্মচারীদের জিম্মি করার বিষয়টি আমেরিকানরা পছন্দ করেন না। আশা করি প্রেসিডেন্ট এ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন”।
রিপাবলিকানরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় আশা করেন ডেমোক্রেটরা সমঝোতার দাবীগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। সেনেট মেজরিটি লীডার মিচ ম্যাককনেলের মতে:
“আমি আশা করি আমাদের ডেমোক্রেট বন্ধুরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন যা তারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বলে আসছেন যে সবার আগে শাটডাউন তুলে নিয়ে সরকারী কাজকর্ম খুলে দিলে তারা সমঝোতা আলোচনায় বসবেন। এ কথাটি মাথায় রেখে তকারা যেনো সারা বছরের কেন্দ্রিয় সরকার চালানোর খরচ পাশ করার লক।ষ্য সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচনায় বসেন”।
হাউজ স্পিকার ন্যান্সী পেলোসি দেয়াল তোলা বিষয় নিয়ে ডেমোক্রেটদের অবস্থান পরিস্কারভাবে তুলে ধরেই বলেছেন, তারা সে অবস্থানেই অনড়।
“আমাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। আর সেটিই মনে হয় প্রেসিডেন্ট খাটো করে দেখছেন”।
সীমান্ত দেয়াল তোলায় সমঝোতা না হলে জাতীয় জরূরী আবস্থা ঘোষণা করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে পরে বলেছেন আগে চেষ্টা করে দেখি আলোচনা করে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায় কিনা।
“আমরা ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি; দেখি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় কিনা। না হলে আমরা অবশ্যই জরুরী আবস্থার দিকে যাবো। এটি একটি জাতীয় জরুরী অবস্থা”।
অভিবাসন নিয়ে চলমান বিতর্ক সাময়িক এবং এর দ্রুত সমাধান হবে এটাই সকলের আশা।