আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হতে চান যে ক’জন, তাদের মধ্যে ১০ জন বুধবার সরাসরি টিভি বিতর্কে অংশ নিলেন। ফ্লোরিডার মায়ামীতে অনুষ্ঠিত ঐ বিতর্কে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডনাল্ড ট্রাম্প যেনো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে না পারে সেই লক্ষ্যে সবাই কে কি করতে চান কিভাবে করতে চান তা তুলে ধরেন সরাসরি ঐ বিতর্কে প্রার্থীরা। ভয়েস অব আমেরিকার কেন্দ্রীয় বার্তা বিভাগে আমাদের সহকর্মি জিম মেলোন ও রিচার্ড গ্রীনের প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সেলিম হোসেন ও তাহিরা কিবরিয়া।
বুধবার অনুষ্ঠিত প্রথম সরাসরি টিভি বিতর্কে অংশ নেন ম্যাসাচুসেটস সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, নিউ জার্সি সেনেটর কোরি বুকার, টেক্সাসের সাবেক কংগ্রেসম্যান বেটো ওরোরকে, নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডে ব্লাসিও, টিম রায়ান, হুলিয়ান ক্যাস্ট্রো, এ্যামি ক্লোবুচার ও তুলসী গ্যাব্বার্ড।
মায়ামীর বিতর্ক মঞ্চে ম্যাসাচুসেটস সেনেটর ওয়ারেন এলিজাবেথ বললেন তিনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রশাসনকে আরো জনগন বান্ধব করতে চান।
“আমি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চাই- কারন আমি বিশ্বাস করি আমাদের সরকার, অর্থনীতি ও আমাদের দেশকে আরো সমৃদ্ধ করা সম্ভব। শুধু সমাজের উঁচু শ্রেনীর জন্য নয়, শুধু ধনীদের জন্যে নয়; সকলের জন্যে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি আমার পরিবারের জন্যে যতোটুকু করবো, আপনাদের সবার জন্যে ঠিক ততোটুকুই করবো”।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডে ব্লাসিও কর্মজীবি শ্রেনীর সমর্থন চান।
“কর্মজীবি শ্রেনীকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে; কারন তাদের পরিশ্রমের দাম সবচেয়ে বেশী”।
ওহাইও কংগ্রেসম্যান টিম রায়ান বলেন ডেমোক্রেটরা সবার সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ রক্ষা করেনা বলেই সমস্যা।
“আমরা শ্রমজীবি শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি না। অন্তত আমার রাজ্যেতো না। ওহাইও এবং শিল্প সমৃদ্ধ মধ্য-পশ্চিমের অঞ্চলে শ্রমজীবি শ্রেনী উপেক্ষিত। আমরা সকল ধরনের যোগাযোগে ব্যার্থ হয়েছি”।
নিউ জার্সি সেনেটর কোরি বুকার দাবী করেন আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হারাতে তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ডেমোক্রেটিক প্রার্থী।
“আসছে নির্বাচন তাকে সরানোর জন্যে একটি বড় সুযোগ। এটি একই সঙ্গে আমাদের জন্যেও পরীক্ষা এবং আমরা কে বা কারা তার প্রমান করতে হবে। প্রমান দিতে হবে যে আমরা একে অপরের জন্য অপরিহার্য”।
বুধবারের বিতর্কের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিলো অভিবাসন।
সাবেক মন্ত্রী হুলিয়ান ক্যাস্ট্রো- ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিমালা ও কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। এল সালভাদরের অভিবাসন প্রত্যাসী বাবা ও কন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যুর যে ছবি সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছে সে বিষয় উল্লেখ তিনি বলেন- অভিবাসন বিদ্বেষ বন্ধ করতে হবে।
“অস্কার ও তার কন্যা ভ্যালেরিয়ার পানিতে ভেসে থাকার ছবি হৃদয়বিদারক। আমাদের সকলকে আহত করেছে সেই ছবি”।
সাবেক টেক্সাস কংগ্রেসম্যান বেটো ওরোরকেও একই প্রসঙ্গ তুলে, নিন্দা জানান।
ভ্যালেরিয়া ও তার বাবা অস্কারকে ভুলে গেলে চলবে না। তাদেরকে এই দেশে গ্রহন করার মানসিকতা থাকতে হবে। গ্রহন করতে হবে। আমাদের আশ্রয় প্রার্থনার আইনে তাদেরকে গ্রহন করতে হবে। আমরা দেয়াল নির্মান করবো না। আমরা শিশুদেরকে কারাগারে প্রেরণ করবো না”।
ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের উত্তেজনা নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রার্থীরা। মিনেসোটা সেনেটর এমি ক্লোবুচার বলেন তিনি ভয় পাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দেশকে আবার যুদ্ধে জড়িয়ে না ফেলেন।
“আমাদের প্রেসিডেন্ট সত্যিকার অর্থে প্রতি দিন একটু একটু করে যুদ্ধের দিযে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা যুদ্ধ থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে আছি। মাত্র একটি টুইট দুরে আছি। আর বাথরুমে বসে সকালে পররাষ্ট্র নীতি প্রনয়নের কথা চিন্তা করা ঠিক না”।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়টিও ছিল বুধবারের বিতর্কের অন্যতম বিষয়। ওহাইও প্রোতিনিধি টিম রায়ান এ নিয়ে কথা বলেন।
“গত কয়েক বছর ধরে যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে এমন অবস্থা চললে এমন অবস্থায়ই পড়ে থাকতে হবে”।
তবে হাওয়াইয়ের প্রতিনিধি তুলসি গ্যাব্বার্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে এখনই ফিরে আসার সময়।
“একজন যোদ্ধা হিসাবে আমি বলবো- ওই উত্তর গ্রহনযোগ্য নয়। আমাদের সেনাদেরকে আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার সময় এখন। আফগানিস্তানে আমরা আমাদের বহু সেনা সদস্যকে হারিয়েছি”।
সাবেক মেরিল্যান্ড কংগ্রেসম্যান জন ডেল্যানী ও ওয়াশিংটন গভর্ণর জে ইন্সলিও বুধবারের বিতর্কে অংশ নেন।
আজ বৃহস্পতিবার জো বাইডেন, বার্নি স্যান্ডার্স, কামালা হ্যারিস, মেয়র পিটে বুটিগেগসহ আরো ছয় জন ডেমেক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।