অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের ভবিষ্যৎ কি


প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের শুনানীতে সাবেক হোয়াইট হাইজ কাউন্সেল ডনাল্ড ম্যাকগানকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন ফেডারেল আদালতের বিচারক।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের শুনানীতে সাবেক হোয়াইট হাইজ কাউন্সেল ডনাল্ড ম্যাকগানকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন ফেডারেল আদালতের বিচারক।

এ পর্যন্ত যতোগুলো শুনাণী হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ডেমোক্রটরা দাবী করছেন, প্রেসিডেন্ট যে দায়ী তা পরিস্কার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর রিপাব্লিকান সতীর্থরা বলছেন, কিছুই প্রমান হয়নি। এ অবস্থায় অভিশংসন তদন্তের ভবিষ্যৎ কি, তার প্রভাব কতোটা পড়বে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, অভিশংসন প্রক্রিয়াটি কি, কিভাবে হয়; এসব নিয়ে এই রিপোর্টটি।

please wait

No media source currently available

0:00 0:05:51 0:00

বিচারক কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন বলেছেন শুনানী থেকে হোয়াইট হাউজের বর্তমান বা সাবেক কোনো কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই।

জ্যাকসনের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপীল করার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। অপরাপর যাদেরকে শুনানী থেকে বিরত রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন পররাস্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন এবং ভারপ্রাপ্ত চীফ অব ষ্টাফ মাক মালভেনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জুলাই মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনিস্কির যে ফোনালাপ হয়েছিল তাতে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার বিপরীতে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্পর্কে কোনো তথ্য চাওয়া হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কে ঐ সকল কর্মকর্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন তথ্য থাকতে পারে বলে মনে করেন ডেমোক্রেট আইনপ্রনেতারা। সেই কারনেই তাদেরকে শুনানীতে আনতে চান তারা।

ম্যাকগান ২০১৮ সালের অক্টোবরে হোয়াইট হাউজের কাউন্সেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তদন্তের সময় বিশেষ কৌশূলী রবাট মুলারের রিপোর্টে ম্যাকগান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি তদন্তকারীদেরকে বলেন ট্রাম্প মুলারকে বরখাস্ত করতে বলেছিলেন, যদিও পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসন তদন্তের শুনানী প্রসঙ্গে বারবারই বলেছেন ঐ তদন্তে কিছুই পাওয়া যাবেনা। তিনি কোনো ভুল করেন নি। তিনি একে ধাপ্পা এবং ছিদ্রান্বেষণ বলে মন্তব্য করেন।

ডেমোক্রেট আইনপ্রনেতারা গত ক’দিনের শুনানীর সূত্র ধরে বলছেন সবার বক্তব্যে এটা পরিস্কার হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যাক্তগত স্বার্থে ক্ষমতার ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। রিপাবলিকানরা বলছেন কিছুই প্রমানিত হয়নি।

সোমবার হাউজ ইন্টেলিন্স কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাডাম শিফ এক চিঠিতে বলেছেন কমিটি এ বিষয়ক রিপোর্ট তৈরী করছে। ঐ রিপোর্ট জুডিশিয়ারি কমিটিতে যাবে এবং সেই কমিটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রতিবেদন লিখবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান অভিশংসন তদন্তের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে শংসয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। অভিশংসন বিষয়ে যুক্তরাস্ট্রের সংবিধানে যেসব ধাপ উল্লেখ করা আছে সেই অনুযায়ী এগুচ্ছেন সকলে।

প্রিয় স্রোতা অভিশংসন প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দেয়ার জন্যে আমেদের সহকর্মী ষ্টিভ রেডিশ তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন – ইম্পিচমেন্ট বা অভিশংসন- শব্দটির, মধ্য শোড়ষ শতকে ইংল্যান্ডে উৎপত্তি ঘটে।

যুক্তরাস্ট্রের সংবিধানে ইম্পিচমেন্ট শব্দটির উল্লেখ রয়েছে ছয়বার, পরিস্কার করে বলা হয়নি কিভাবে।

সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে প্রতিনিধি পরিষদের দুই কক্ষের কাছে ইম্পিচমেন্টের সকল ক্ষমতা দেয়া হয়।

প্রতিনিধি পরিষদে তদন্ত করা হয়, এবং তার ভিত্তিতে একটি অভিশংসন প্রতিবেদন তৈরী করা হয়। তারপর এ নিয়ে ভোটাভূটি হয় এবং তাতে অভীশংসনের পক্ষে সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ ৪৩৫ ভোটে পাশ হতে হয়।

অভিশংসন মানে অটোমেটিক্যালি বা এম্নি এম্নি প্রেসিডেন্ট পদচ্যুত হবেন এমন নয়।

অভিশংসন প্রতিবেদন প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত হলে-সেনেটে সেটি নিয়ে বিচার বসবে। ঐ বিচারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারক সভাপতিত্ব করবেন।

প্রেসিডেন্ট চুড়ান্তভাবে পদ থেকে সরাতে হলে সেনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের ভোট অভিশংসনের পক্ষে পড়তে হবে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক সুজান লো ব্লকের মন্তব্য:

“নির্বাচনের আগে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করা একটি সাংঘাতিক বিষয়। এবং সংবিধান কখনো চায়নি, বা চায়না এমনটি ঘটুক। ফলে সেখানে বড় কিছু বাধা আছে; সেনেটর দুই তৃতীয়াংশের বা ৬৭ সদস্যের ভোট, এবং অবশ্যই তা উভয় দলের”।

সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে নির্নায়ক ও সাজার কথা বলা আছে। অভিশংসনের মাধ্যমে পদ থেকে সরানোর ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতা, ঘুষ বা অন্য উচ্চ মাত্রার অপরাধ এবং বেআইনী কাজকর্মের প্রমানের কথা বলা আছে।

যুক্তরষ্ট্রে এ যাবৎকালে ১৪জন বিচারক এবং একজন বিচারপতিকে অভিশংসিত করা হয়েছে। নয় জনকে বিচার করে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং পদচ্যুত করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্টদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন তদন্ত করা হয়েছে্, দুইজনকে ইম্পিচ করা হয়েছে। কাউকে কনভিক্টেড বা অপরাধী করা হয়নি।

১৮৬৮ সালে এ্যান্ড্রিউ জনসনকে অভিশংসশিত করা হয় যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দায়ে। তখন নাগরিক অধিকারের দাবীতে সংঘাতময় অবস্থায় সেনেটের আপত্তি স্বত্বেও তিনি তা করেছিলেন।

সেই ঘটনার প্রায় একশ বছর পর ১৯৭৪ সালে রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিশংসন করার কথা উঠলে ভোট হবার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।

১৯৯৮ সালে বিল ক্লিন্টনকে, তাঁর এক ইন্টার্ন কর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ বিষয়ে শপথ করে মিথ্যা বলায়, তাঁকে ইম্পিচ করা হয়।

আর এখন ডনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসন তদন্তের মুখে। ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি বিদেশী সরকারের সহায়তা নিয়েছেন।

অভিশংসন শুনানী চলছে; বছর শেষ হবার আগেই হয়তো ইম্পিচমেন্ট ভোট হবে এমন কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

XS
SM
MD
LG