অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তালিবান দখলদারিত্বে আঞ্চলিক চরমপন্থীরা "শক্তিশালী" হচ্ছে যা পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে


১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ হেরাতে একটি রাস্তার ধারে এক তালেবান যোদ্ধা
এফপি
১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ হেরাতে একটি রাস্তার ধারে এক তালেবান যোদ্ধা এফপি

চীন ও পাকিস্তান মনে করে যে আফগানিস্তানে বিদেশী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তালিবান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের যে অঙ্গীকার করেছে তা পূরণ করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালিবান ক্ষমতা দখলের কারণে ঐ দলগুলো ইতিমধ্যে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থের জন্য তা নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ২০তম সাংহাই সহযোগিতা শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উভয়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তালিবানদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানান এবং তালিবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার পূরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

তালিবান সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি, তবে তারা বলেছে যে আফগানিস্তান থেকে কোন দেশের বিরুদ্ধে কোন গোষ্ঠীকে তারা কিছু করতে দেবে না। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন যে এই দলের দ্রুত কাবুল দখল করার ফলে ঐ অঞ্চলের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যে সাহস সঞ্চার করেছে । আঞ্চলিক দেশগুলো এখন কম নয় বরং আরও বেশী করে নিরাপত্তার প্রয়োজন বোধ করতে পারে।

ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক এবং কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ আকিল শাহ বলেন, “ তালিবানরা এই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এমন কোনও প্রমাণ নেই।” তিনি আরও বলেন "তালিবানদের সমস্যা হচ্ছে তারা যা বলে, তারা সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করে।"

শাহ বলেন, তালিবানদের আফগানিস্তান দখল, বিশেষ করে কাবুল দখল করার ঘটনা , সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিশেষ করে যে দলগুলো আফগানিস্তানেই রয়েছে তাদের জন্য ছিল "মনোবল বৃদ্ধিকারক"।

২০২১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে প্রায় ৮ থেকে ১০হাজার "বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা" রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে "মধ্য এশিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশনের উত্তর ককেশাস অঞ্চল, পাকিস্তান এবং চীনের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মানুষ।

২০২০ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয় আফগানিস্তানে ৬ থেকে সাড় ৬ হাজার বিদেশী যোদ্ধা পাকিস্তান থেকে এবং ঐ জঙ্গীদের অধিকাংশই তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে যুক্ত।

পাকিস্তানের জন্য হুমকি

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টিটিপি পাকিস্তানে তাদের আক্রমণ বাড়িয়েছে। দলটি আফগানিস্তানে তালিবানের প্রতি অনুগত।

১৫ সেপ্টেম্বর ঐ দলটি আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করেছে।

টিটিপি গত ৫ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ঐ আক্রমণে কমপক্ষে তিনজন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়।

১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ তাজিকিস্তানের দুশানবেতে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ তাজিকিস্তানের দুশানবেতে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

শাহ আরও বলেন যে পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য টিটিপি "প্রধান হুমকি" কারণ টিটিপি "পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে" এবং শেষ পর্যন্ত "পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত" করতে চায়।

পাকিস্তানী কর্মকর্তারা বলেছেন, টিটিপি আফগানিস্তান থেকে হামলার পরিকল্পনা করছে এবং তারা আশা করছেন যে তালিবান তাদের অঙ্গীকার মাফিক এই দলটিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা করার জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না। তবে এই দলের বিরুদ্ধে তালিবান যে কোনও ধরণের দমনমূলক পদক্ষেপ শীঘ্র গ্রহণ করতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত খুব কমই পাওয়া গেছে।

চীনের জন্য হুমকি

সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক গবেষক আব্দুল বাসিত ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে টিটিপি আক্রমণ অব্যাহত রাখবে।

বাসিত বলেন, আফগানিস্তানে তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ ঐ অঞ্চলে "উগ্রবাদ" আরও বৃদ্ধি করবে এবং "ফলে দলগুলো তাদের সদস্য নিয়োগও বাড়াবে।"

তিনি আরও বলেন, টিটিপির সাথে ইষ্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টসহ (ইটিআইএম) অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। "টিটিপি তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তারা একসাথে থাকত। তারা একসঙ্গে লড়াই করেছে।"

ফাইল ফটোঃ ১৪ই জুলাই ২০২১ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এএফপি
ফাইল ফটোঃ ১৪ই জুলাই ২০২১ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এএফপি

ইষ্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট বা ইটিআইএম হলো উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি দল।চীন ঐ দলটিকে তার জিনজিয়াং অঞ্চলের "সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং চরমপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী" বলে অভিহিত করে। তবে জাতিসংঘ ইটিআইএমকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবেই চিহ্নিত করে যাদের কয়েকশ যোদ্ধা আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশে আছে বলে জানা যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে ঐ দলটিকে সরিয়ে নিয়ে বলেছে যে ঐদলটিকে সন্ত্রাসী বলার মত এমন "কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ" তাদের নেই।

XS
SM
MD
LG