অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আটকেপড়া অবাঙালিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন


আটকেপড়া অবাঙালিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন, ছবি- মানবজমিন
আটকেপড়া অবাঙালিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন, ছবি- মানবজমিন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে ততই আটকে পড়া অবাঙালিরা (বিহারি) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এখন উর্দু নয়, বাংলা হয়ে গেছে তাদের প্রধান ভাষা।

২০০৮ সালের ১৮ মে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে আটকে পড়া অবাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়। সাদাকাত হোসেন নামে একজন অবাঙালি নাগরিকত্ব চেয়ে আদালতে রিট করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রশিদ ও বিচারপতি আশরাফুল ইসলাম এই রায় দেন। এই রায়ে উর্দুভাষী লোকজন যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আইনি লড়াই করেন। আদালতের এই রায়ের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত অবাঙালিরা রাষ্ট্রহীন ছিলেন। এখন তাদের সামনে নাগরিক হওয়ার সুযোগ এসেছে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ১৩ জেলায় ৬৬ টি ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অবাঙালি বসবাস করছেন। এর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। স্বাধীনতার পর কয়েক দফায় ২ লাখ ৬৮ হাজার অবাঙালিকে পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন করা হয়। এরপর পাকিস্তান এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আর যুক্ত থাকেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাদের জন্ম পাকিস্তানে তাদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক অবাঙালি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন। তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। এছাড়া অবাঙালিদের একটি অংশ জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তারা মনে করেন, পরিচয়পত্র নেওয়ার পর তাদেরকে ক্যাম্প ছাড়তে হবে। অর্থাৎ তারা ক্যাস্পে থাকার সুবিধা হারাবেন। এরপর তারা কোথায় থাকবেন, কীভাবে থাকবেন তা অনেকটাই অনিশ্চিত। এ কারণে তারা আপাতত ক্যাম্পেই থাকতে বেশি আগ্রহী।

এদিকে আদালতের রায়ের পর থেকে ক্যাম্পগুলোতে সরকারি ত্রাণ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ২০১৫ সালে অবাঙালি নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে এই দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। বলেন, সরকার অবশ্যই কিছু একটা করবে।

আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি রাখবেন। তার ভাষায়, আমরা যদি এদেশের নাগরিক হই তাহলে কেন ক্যাম্পে থাকব। আমাদেরকে অবশ্যই থাকার জায়গা দিতে হবে। এটা তো বাংলাদেশের আইনেই বলা আছে।"

শওকত আলী আমেরিকার সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত এনজিও ওব্যাক এনএনজি জুনিয়র হাইস্কুলের হেডমাস্টার হিসেবে কর্মরত। তিনি আরও বলেন, "পাকিস্তান আমাদের নেবে না, আমরাও যেতে চাই না। বাংলাদেশই আমাদের ঠিকানা। তিনি জানান, অবাঙালির ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। চাকরি-বাকরি করছে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু সংখ্যায় খুবই কম।"

ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী

XS
SM
MD
LG