অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিলেটের শাবিপ্রবির বিষয়ে সরকারকে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান শিক্ষক সমিতির


শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচির অংশ। (ছবি- ইউএনবি)
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচির অংশ। (ছবি- ইউএনবি)

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক সমিতি।

সভায় চলমান সংকট নিরসনে চার দফা দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। দাবির মধ্যে রয়েছে—

এক. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানানো হয়। অবিলম্বে সরকার কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দুই. অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

তিন. উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। এ ক্ষেত্রে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করা হয়।

চার. শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতায় সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও–বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

এদিকে এদিন (রবিবার) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় উপাচার্যের বাসভবন, গেস্টহাউজ, শিক্ষক ডরমিটরি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে ডরমিটরিতে থাকা শিক্ষকদের পাশাপাশি গেস্টহাউজে থাকা করোনা ল্যাবে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকেরাও সমস্যা পড়েন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে মানব-শেকল তৈরি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, পুলিশ ছাড়া কাউকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচির ১০০ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে রবিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১০০ ঘন্টা অতিবাহিত হয়। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

রবিবার বিকেলে নতুন করে এই কর্মসূচিতে আরও চার শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৭-এ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে সাত শিক্ষার্থীকে ক্যানোলার মাধ্যমে লিকুইড স্যালাইন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১২ জন অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পানিসহ কোনো ধরনের তরল খাদ্য গ্রহণ করছেন না। যার ফলে অনেকেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ অনশন ভাঙবেন না।

উপচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে ২৪ শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। এর মধ্যে অনশনকারী এক শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্য অসুস্থ হওয়ায় অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী

এর আগে গতকাল শনিবার (২২ জানুয়ারি) গভীর রাতে আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী নানা বিষয়ে আশ্বাস দিলেও উপচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আলোচনায় উপস্থিত থাকা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, “ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আইনগত ও একাডেমিক সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য তিনি সেটি দেখবেন। মন্ত্রী আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে আসেন। মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে তিনি আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “রবিবার শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে রবিবার আমাদের জানাবেন। ভিসিকে ছুটি দেওয়া বা অপসারণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।”

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী তবে অনশন ভাঙবেন না। সবকিছু ঠিক থাকলে রবিবার দুপুরে এ বিষয়ে তারা বিফ্রিং করবেন। মোট ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর সাত জন ভিসির বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আলোচনায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন শাহরিয়ার আবেদিন, অপূর্ব, মীর রানা, সাব্বির, নাফিসা আঞ্জুম ইমু, রোমিও, উমর ফারুক, ইয়াসির সরকার, সাদিয়া আফরিন ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

উল্লেখ্য, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়।

পরদিন (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে শটগানের বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণা দিলেও, শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

XS
SM
MD
LG