অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

থাইল্যান্ডের সঙ্গে তিন দশক পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন সৌদি আরবের


থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রাহমান বিন আব্দুলাজিজ। (ছবি- সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) থেকে এপি)
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রাহমান বিন আব্দুলাজিজ। (ছবি- সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) থেকে এপি)

প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় পর থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার রিয়াদ সফরের সূত্র ধরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

১৯৮৯ সালে এক রাজনৈতিক বিবাদের কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। সৌদি রাজকুমারের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ গয়না চুরির এ ঘটনা “ব্লু ডায়মন্ড” কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত। এই চুরির ঘটনায় সে সময় অনেকগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

সৌদি প্রেস এজেন্সিতে (এসপিএ) মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পূর্ববর্তী সব শত্রুতা ভুলে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জ্বালানি এবং পেট্রোকেমিকেল থেকে শুরু করে পর্যটন, সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আশা ব্যক্ত করেন দুই দেশের নেতারা। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কার-২০৩০ অনুযায়ী দেশটি তেলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমিয়ে পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট।

থাইল্যান্ডকে “সাংস্কৃতিক ভূমি” অভিহিত করে সৌদি আরবের বিমানসংস্থা জানিয়েছে তারা এ বছরের মে থেকে সৌদি আরব– থাইল্যান্ড সরাসরি বিমান পরিচালনা করবে।

১৯৮৯ সালে চুরি যাওয়া গয়নার মধ্যে ছিল ২ কোটি ডলার মুল্যমানের ৫০ ক্যারেটের একটি নীল হীরা। সৌদি আরবের এক রাজকুমারের বাড়িতে এক থাই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওই গহনাগুলো চুরি করেন।

এ সময় সৌদি আরব শত শত থাই অভিবাসী শ্রমিকের ভিসা নবায়ন বন্ধ করে দেয় এবং হাজার হাজার থাই মুসলিম নাগরিকদের হজ্বের ভিসা বাতিল করে। সৌদি আরব তার নাগরিকদের থাইল্যান্ডে ভ্রমণও নিষিদ্ধ করে।

এ ছাড়া মহামূল্যবান ওই হীরার খোঁজে থাইল্যান্ডে যাওয়া তিন সৌদি কূটনীতিককে থাইল্যান্ডে গুলি করে হত্যা করা হয়। ব্যাংককে বসবাসকারী এক সৌদি ব্যবসায়ীও ওই হীরার সন্ধান করছিলেন। এ সময় তিনি নিখোঁজ হন এবং ধরে নেওয়া হয় তাকেও হত্যা করা হয়েছে।

এ সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এর সমাধানে থাই সরকার “অত্যন্ত আন্তরিক” বলে বিবৃতি দেন।

নব্বইয়ের দশকে থাই পুলিশ মামলাটি মীমাংসার দাবি করলেও, সৌদি সরকারকে ফেরত পাঠানো গয়নাগুলো নকল ছিল বলে জানিয়েছিল সৌদি আরব।

এ সময় একাধিক থাই সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ পায়, থাইল্যান্ডের পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের পরিহিত গয়নার সঙ্গে চুরি যাওয়া গয়নাগুলোর মিল ছিল।

যদিও নীল হীরাটির কোনো সন্ধান মেলেনি এখনো।

সাম্প্রতিক বিবৃতিতে থাই সরকার আরও জানায়, তারা কোনো নতুন আলামত পেলেই আবারও তদন্ত শুরু করবে। এই ঘটনায় থাই পুলিশ বাহিনীর নানা দুর্নীতির কাহিনী সামনে আসে। ধারণা করা হয়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আসল গয়নাগুলো নিজেদের কাছে রেখে নকল গয়না ফেরত পাঠান।

ওই ঘটনায় বৈদেশিক আয় হ্রাস এবং পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে ব্যপক প্রভাব পড়ে। দেশটি তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনস্থাপনে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

অন্যদিকে উচ্চাভিলাষী সৌদি যুবরাজ বহির্বিশ্বে মিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধিতে লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী, যেমন ইরান, কাতার, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন।

XS
SM
MD
LG