অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকার চেষ্টা করছে, তবে সময় লাগবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন


বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন (ফাইল ছবি )।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন (ফাইল ছবি )।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব ও এর সাবেক এবং বর্তমান ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, "সরকার চেষ্টা করলেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সময়সাপেক্ষ বিষয়।"

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরে র‍্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের আলোচনা করেনি উল্লেখ করে ড. মোমেন সংসদকে বলেন, "নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের আয়োজন হচ্ছে।আলোচনা চলছে।

সরকার বিশ্বাস করে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে।"

র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে।সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে বিদেশে ৮টি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে। যদিও বিএনপির তরফে এই অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়েছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, "বিএনপি বিদেশে কোনো লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি।"

রবিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও জাতীয় পার্টির সদস্যমুজিবুল হক চুন্নু লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বিবৃতি দাবি করেন।ওই আলোচনার সূত্র ধরেই বুধবার সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন ড. মোমেন।ওই বিবৃতি দেয়ার সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনাও অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

বিবৃতিতে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ের পাশপাশি র‍্যাবের ওপর দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী জানান, ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়।তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি।অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচারে পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে সরকার।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে।এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে।ইনশা আল্লাহ, আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব, আমার বিশ্বাস র‍্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন উইথড্র করবে। তবে কালকে হবে না।সময় লাগবে।আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।" বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের অপপ্রচারের কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পিআর প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে উল্লেখ করে এর ব্যাখ্যাও দেন মন্ত্রী। বলেন, "আমরা একটা পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিলাম। লবিস্ট ফার্ম আর পিআর ফার্মের মধ্যে পার্থক্য আছে।একটা সিনেটে গিয়ে, ইউএসএ গিয়ে বা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে তদবির করে।আমরা সেই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেইনি। আমরা যাদের নিয়োগ দিয়েছি তাদের দায়িত্ব- অপপ্রচার বা যে সকল মিথ্যা তথ্য প্রকাশ হয় সেগুলো জনগণকে জানানো।সত্য কথাগুলো তারা বলবে।"

ওদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করে বাংলাদেশের র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্য।স্লোভাকিয়ার ওই সংসদ সদস্য তার চিঠিতে র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমের অভিযোগ এনেছেন।ওই চিঠির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, "চিঠিতে তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়।"

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগেবাংলাদেশের র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের তরফে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সরকারকে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।

XS
SM
MD
LG