অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইসি গঠন বিল বাংলাদেশ সংসদে কণ্ঠভোটে পাস


বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। (ছবি- অ্যাডোবে স্টক)
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। (ছবি- অ্যাডোবে স্টক)

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগে একটি আইনি কাঠামো পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান ও পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনকে আইনি কাঠামো দিতে ২৩ জানুয়ারি সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন। এরপর বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বুধবার কমিটির সভাপতি এম শহীদুজ্জামান সরকার মূল বিলে কিছু পরিবর্তন এনে কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে আইনটির মাধ্যমে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রমকে আইনি কাঠামো দেয়া হবে।

যোগ্যতা

সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর সিইসি ও ইসি হতে গেলে তাদের বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে; তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এ ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

অযোগ্যতা

কোনো আদালত কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে ‘উন্মাদ’ ঘোষণা করা হলে; 'দেউলিয়া' ঘোষণার পর কারাগার থেকে মুক্তি পাননি; বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ত্যাগ করে অন্য কোনো দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে; নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কোনো আইন দ্বারা বা তার অধীনে এই ধরনের পদের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হলে তিনি সিইসি বা ইসি হওয়ার জন্য ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।

এছাড়া একজন ব্যক্তি একবার সিইসি পদে অধিষ্ঠিত হলে তিনি ইসি পদের জন্য যোগ্য হবেন না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তাকে সিইসি নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।

সার্চ কমিটি

বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করবেন। যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। অন্য পাঁচ সদস্য হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত একজন নারীসহ আরও দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।

সংবিধানে একটি আইনে সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হলেও অতীতে এ আইন প্রণয়ন করা হয়নি।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।

সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হচ্ছে।

সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুসারে রাষ্ট্রপতি ২০১২ ও ২০১৭ সালে সিইসি ও ইসিদের বাছাই করেছিলেন, যারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন।

বিলে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সার্চ কমিটি, তাদের কার্যাবলী এবং সিইসি ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ অনুসরণ করে করা নিয়োগ বৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং এ বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।

বর্তমান ও আগের ইসি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার প্রার্থীদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

বিলে আগের দুটি সার্চ কমিটিকে আইনি বৈধতা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বিলে সার্চ কমিটি কর্তৃক রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম সুপারিশ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করার বিধান রাখা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG