বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস ঢাকায় ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে কুতুবদিয়ায় ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রবিবার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙামাটি, ফেনী, মৌলভীবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং সীতাকুণ্ড উপজেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
পঞ্চগড়ে টানা তিনদিন থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা ক্রমশ কমছে।
রবিবার সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা এ মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শনিবার জেলায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় পঞ্চগড়ের জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। তীব্র ঠান্ডায় কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ, কৃষি ও শ্রমিকেরা। এ ছাড়া ঠান্ডার প্রকোপে সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে।
রবিবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে মাঘের কনকনে হাঁড় কাপানো ঠান্ডায় কাবু হচ্ছেন পঞ্চগড়বাসী। মাঘের এই কনকনে শীতে অসহায় দরিদ্র আর ছিন্নমূল মানুষ কষ্টে আছেন। শীতের প্রকোপে শিশু আর বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও পড়েছে শীতকষ্টে।
জেলা শহরের রিকশাচালক মোমিনুল জানান, ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চালাতে পারছি না। সকালে গাড়ি নিয়ে বসে আছি। ভাড়াও মিলছে না।
জেলার সদর উপজেলার ধাক্কামারা এলাকার আল আমিন জানান, হিমালয় ও সাইবেরিয়ান শীতের বাতাস আমাদের এলাকায় প্রবাহিত হওয়ায় এখানে শীত বেড়েছে।
পঞ্চগড় জেলা পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু জানান, হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী ও উত্তরের হিমশীতল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় পঞ্চগড়ে ক্রমশ তাপমাত্রা কমছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শষ্য) মো. শাহা আলম মিয়া বলেন, “ঘনকুয়াশা গম ও সরিষাসহ কিছু ফল ও ফসলের জন্য আশীর্বাদ হলেও অব্যাহত ঘন কুয়াশায় আলু, বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য আমরা কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পরামর্শ দিয়েছি।”
আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে।
২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সারাদেশের মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে।
তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশার কারণে তাপামাত্রা কমছে। রবিবার সকাল ৯টায় এখানে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং এখানে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
কুড়িগ্রামে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে গত দুই দিন ধরে চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এরফলে জনজীবনে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। শনিবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলাজুড়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করায় কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এদিকে তীব্র শীতের কারণে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পুলক কুমার সরকার বলেন, “শনিবার হাসপাতালে ২৯৬ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ জন এবং ডায়রিয়া আইসোলেশনে ৩৯ জন। শীতজনিত কারণে শিশুরা যাতে সমস্যায় না পড়ে এ জন্য গরম কাপড়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও তাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সুষম খাবার দিতে হবে। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন অব্যাহত রাখতে হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, “তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করলে কৃষিতে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হবে। আলুতে লেট ব্লাইডের আক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়াও বোরা বীজতলা লালচে হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কৃষকরা ইতিমধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমির ওপরে প্লান্টেশন শুরু করেছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আলুর ক্ষেত্রে ছত্রাক নাশক স্প্রে করার কম্পোজিশন কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে জানিয়ে দিচ্ছি। এ ছাড়াও আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছে। ৩১ জানুয়ারি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের লোকবল সেখানে সম্পৃক্ত থাকায় এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হাতে আসেনি। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর বোরো বীজতলা ও ৭ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে।
এদিকে, ঘন কূয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার স্বাভাবিক জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন কাজকর্ম। অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকেই। সড়কগুলোতে কমে গেছে যানবাহনসহ কর্মজীবী মানুষের আনাগোনা। সকাল থেকে কুয়াশার সাথে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে যানবাহনে হেড লাইট জ্বালিয়েও চলতে দেখা যায়। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও পড়েছে শীতকষ্টে। অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রকোপে দেখা দিয়েছে সর্দি কাশিসহ নানা ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধী।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিছুর রহমান জানান, শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই অবস্থা আরও ২-১দিন অবস্থান করতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, শীতে মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এজন্য সরকারিভাবে প্রাপ্ত প্রায় ৭০ হাজার কম্বল উপজেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৬ হাজার সোয়েটার বিতরণ করা হয়েছে। শীত বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।