অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে জনসনের টিকা–স্বাস্থ্যমন্ত্রী


মহাখালীতে বিসিপিএস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। (ছবি- ইউএনবি)
মহাখালীতে বিসিপিএস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। (ছবি- ইউএনবি)

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হিসেবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আমরা কিছু জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা পেয়েছি। খুব শিগগিরই সেগুলো দেওয়া শুরু হবে।”

রবিবার (৩০ জানুয়ারি) মহাখালীতে বিসিপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, “জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা এক ডোজের হওয়ায় আমরা সেগুলো ভাসমান, দিনমজুরদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা না থাকায় তাদের খোঁজ সবসময় পাওয়া যায় না। একবার এক ডোজ দিয়ে দিলে তাদের পরে আর খুঁজতে হবে না।”

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো জনসন অ্যান্ড জনসনের তিন লাখ ৩৬ হাজার ডোজ করোনা টিকা দেশে এসেছে। অন্য টিকার মতোই এই টিকা ইপিআইয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হিসেবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এই টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্য কোম্পানির টিকা যেখানে অন্তত দুই ডোজ দিতে হয়, জনসনের তৈরি এই করোনাভাইরাসের টিকা এক ডোজের। অবশ্য পরে বুস্টার ডোজ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।”

গতবছর জুন মাসেই জনসনের কোভিড টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছিল বাংলাদেশ।

বুস্টার ডোজ দেওয়ার বয়স আরও কমল

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, বুস্টার ডোজ দেওয়ার ন্যূনতম বয়স ৪০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ৫০ বছর পর্যন্ত বুস্টার ডোজ দিচ্ছি। কিন্তু আমরা খুব বেশি পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত খুবই কমসংখ্যক মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। তাই এখন থেকে ৪০ বছর বয়সীরাও পাবেন বুস্টার ডোজ। আমাদের হাতে নয় কোটি টিকা রয়েছে।”

সরকার গত মাস থেকে করোনার টিকার নিয়মিত কেন্দ্রগুলোতে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে। ষাটোর্ধ্ব নাগরিক ও সম্মুখসারির কর্মীদের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার ছয় মাস পরই শুধু বুস্টার ডোজ নেওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিরাই বুস্টার ডোজ হিসেবে তৃতীয় ডোজ পাচ্ছেন। এ জন্য নতুন করে নিবন্ধনের দরকার হচ্ছে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে আমরা ১২ বছরের ওপরে সবাইকে টিকা দেব। আগে শুধু স্কুল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ছিল, এখন শিক্ষার্থী ছাড়াও বাকি সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও এখন টিকা পাবে।”

শিশুদের টিকা প্রয়োগ পদ্ধতি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, “টিকা কার্যক্রম বর্তমানে যেভাবে চলছে, সে পদ্ধতিতেই ১২ বছর বয়সীদের টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রে গেলেই টিকা পাবে। যদি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে, তাহলেই আমরা টিকা দেব। কিছু দেখাতে না পারলেও আমরা তাদের ফেরত দেব না।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই টিকার বয়সসীমা পাঁচ বছর করা হয়েছে, বাংলাদেশেও এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “টিকার বয়সসীমা পাঁচ বছর করার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে আমাদের জানাবে বলে জানিয়েছে। তাদের থেকে আমরা বার্তা পেলেই টিকার বয়সসীমা পাঁচ বছরে নামিয়ে আনা হবে।”

এ সময় অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১০ দিন আইসোলেশনের পর সনদ ছাড়াই কাজে ফেরা যাবে– স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এদিকে আজ রবিবার দুপুর ২টায় ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিন আইসোলেশনে থাকার পর উপসর্গ না থাকলে করোনার নেগেটিভ সনদ ছাড়াই কাজে ফেরা যাবে।

স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “যাদের করোনা পজিটিভ হয়েছে, তাদের ১০ দিনের জন্য আইসোলেশন করতে বলব। ১০ দিন পর জ্বর ভালো হয়ে গেলে, উপসর্গ চলে গেলে তিনি আবার তার কাজে ফিরে যাবেন। কাজে ফিরে যাওয়ার শর্ত হিসেবে আগে আরটিপিসিআর সনদ নিয়ে যেতে হতো, সেটিকে আপাতত স্থগিত রাখছি।”

বুস্টার ডোজ সম্পর্কে তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে।

মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “যারা বুস্টার ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন, যাদের খুদে বার্তা এসেছে বা আসবে, অথচ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ গ্রহণ করবেন।”

দেশের গত সাত দিনের করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বেড়ে চলছিল। ২৯ জানুয়ারি এসে শনাক্তের হার খানিকটা কমেছে। শনাক্ত হয়েছে ৩১ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ ১০ হাজার ৩৭৮ জন। ছুটির দিনের কারণে এ শনাক্ত কম হতে পারে। গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ২৫ জানুয়ারি। সেদিন ১৬ হাজার ৩৩ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

XS
SM
MD
LG